Mahfuzur Rahman Manik
এমন বিক্ষোভ নয় কেন
এপ্রিল 30, 2018
ধর্ষণের বিরুদ্ধে স্পেনের এ বিক্ষোভের মত প্রতিবাদ প্রয়োজন

স্পেনে গতকাল (শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮) তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলেছে। সেখানে হাজারো মানুষের স্বতঃস্ম্ফূর্ত অংশগ্রহণে এমন জোরালো আন্দোলন হচ্ছে ধর্ষণের বিরুদ্ধে। রোববার গার্ডিয়ান অনলাইনে যার শিরোনাম :প্রটেস্ট কন্টিনিউ ফর থার্ড ডে ওভার পাম্পলোনা গ্যাং রেপ একুইটাল অর্থাৎ স্পেনের পাম্পলোনা শহরের গণধর্ষণে অপরাধীদের খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। পাম্পলোনার পুলিশ বলছে, অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। তারা স্লোগান দিচ্ছে, 'এটা যৌন হয়রানি নয়, ধর্ষণ।' কেবল পাম্পলোনায় নয়, মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও ভ্যালেন্সিয়াসহ কয়েকটি শহরেও বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘটনা ২০১৬ সালের, পাম্পলোনা শহরের ষঁাঁড়-দৌড় প্রতিযোগিতার সময় ১৮ বছরের এক কিশোরী ওলফ প্যাক নামে একটি গোষ্ঠীর পাঁচ ব্যক্তি যৌন হামলা চালায়। আদালতে তারা নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত হলেও ধর্ষণের অভিযোগ থেকে তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদেই সেখানে এমন বিক্ষোভ।
ভারতেও ধর্ষণের বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ দেখে গেছে। বিশেষ করে এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে ১৭ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণ, জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ায় মাত্র ৮ বছরের শিশুকন্যা আসিফাকে অপহরণ, গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতজুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধী। দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে বিজেপির দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
আমাদের দেশে ধর্ষণ থেমে নেই। ৯ এপ্রিল ধামরাইয়ে বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২১ এপ্রিল রাজধানীর চলন্ত বাসে উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়। এসব ঘটনায় কিছু প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে বটে। কিন্তু সে অর্থে সমাজে স্বতঃস্ম্ফূর্ত ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে না। গত বছর বাসে গণধর্ষণে রূপার হত্যাকাণ্ডও আমরা দেখেছি। তখনও আজকের ফ্রান্সের পাম্পলোনার ঘটনার মতো বিক্ষোভ আমাদের দেশে হয়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত তিন মাসের হিসাবে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮৭ জন নারী। ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে ১৯ নারীকে আর ধর্ষণের পরে 'আত্মহত্যা' করেছেন দুই নারী। এ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ২১ নারীর ওপর। এভাবে দিনের পর দিন ধর্ষণের পর ঘৃণ্য সামাজিক অপরাধ ঘটছেই। তারপরও আমাদের টনক নড়ছে না, আমরা সেভাবে রাস্তায় নামছি না। হয়তো কোনো ঘটনা সংবাদমাধ্যমের খাতিরে আলোচনায় এলে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সংগঠন প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে। তাতে তেমন প্রভাব পড়ে বলে মনে হয় না।
ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের মতো এমন বিক্ষোভ প্রয়োজন, যেখানে সবাই স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশ নেবে, সমাজকে নাড়া দেবে, অপরাধীদের গায়ে কম্পন সৃষ্টি হবে, কর্তাব্যক্তিরাও তাতে নড়েচড়ে বসবেন। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এভাবে আর চলতে পারে না- সেটিই তো বিক্ষোভের বার্তা।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।