Mahfuzur Rahman Manik
আলুর অপচয়
নভেম্বর 11, 2017
ব্রিটেনে খাবারের জন্য কেনা প্রায় অর্ধেক আলু মানুষ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

আলুর কদর বিশ্বব্যাপী। মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ভুট্টা, গম আর চালের পরই আলুর স্থান। খাদ্য হিসেবে আলু সুষম ও পুষ্টিকর। এটি আমাদের প্রধান খাদ্য না হলেও খাদ্য তালিকায় বলা যায়, ভাতের পরই আলুর স্থান। রান্নাবান্নায় অনেকের আলু প্রধান অনুষঙ্গ। আলুর ভর্তা, ভাজি ছাড়াও আলুর চপ, ফ্রেন্স ফ্রাই, চিপস ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। আলু ছাড়া যেন আমাদের দিন চলে না। এ জন্য মাঝে মধ্যে দামটাও চড়া হয়ে যায়। এ মূল্যবান আলুর সাম্প্রতিক এক খবর চমকে দেওয়ার মতোই। ৮ নভেম্বর ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান বলছে, সে দেশের আলুর প্রায় অর্ধেকই অপচয় হয়। খাবারের জন্য কেনা প্রায় অর্ধেক আলু মানুষ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

গার্ডিয়ান দেখিয়েছে, এভাবে দিনে প্রায় তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ আলু অপচয় হয়। অর্থের হিসাবে তা বছরে ২৩০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ হিসাবে ব্রিটেনে অপচয়ের দিক থেকে আলুর স্থান দ্বিতীয়। সেখানে সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় পাউরুটি। এর পেছনে অবশ্য বড় কোনো কারণ নেই। অপচয় প্রতিরোধে সেখানে সরকারের সঙ্গে কাজ করে দি ওয়েস্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস অ্যাকশন প্রোগ্রাম বার্ যাপ। প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে- অপচয়ের কারণ হলো, অনেক আলুর চামড়া কুঁচকে যায় কিংবা কোনোটায় শিকড় গজানোর কারণে তা খাবারের জন্য না নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় মানুষ। সূত্র বলছে, ব্রিটেনে ১৫ মিলিয়ন টন খাদ্য অপচয় হয়। এর মধ্যে বাসাবাড়িতে অপচয় হয় সাত মিলিয়ন। আলুর অপচয় রোধে সেখানে বিশেষ প্রচারণা চালানো হয়, তাতে আলু সংরক্ষণের উপায়ও বলে দেওয়া হয়- আলু যাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ঠাণ্ডা জায়গায় রাখা হয়, যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

আমাদের দেশে অবশ্য আলু এত বেশি অপচয় হয় না। তবে এটা ঠিক, খাদ্য যথেষ্ট অপচয় হয়। ব্রিটেনের মতো হয়তো আমাদের সে রকম তথ্য নেই। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে আমরা অপচয়ের প্রতিবেদন দেখি। উন্নত বিশ্বের অপচয় আর উন্নয়নশীল বিশ্বের অপচয়ে পার্থক্য আছে। সেখানে অনেকে পুরো খাবার না খেয়েই ফেলে দেয়। আর আমাদের ফসল উৎপাদনের সময় অপচয় হয়। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফসলের প্রক্রিয়ায় ১২ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় হয়। ফসল তোলা, মাড়াই, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতসহ অন্তত ছয়টি ধাপে প্রতি বছর এই অপচয় হয়। ধানের ক্ষেত্রে অপচয় হয় ১২ শতাংশ। আলুও এ রকম। সর্বাধিক ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত সবজি ও ফল অপচয় হয়। অথচ এই খাদ্য দিয়ে এক কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব বলে মত কৃষিবিজ্ঞানীদের। দেশে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে, বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যাপক পরিমাণে খাবারের অপচয় দেখা যায়।

বিশ্বব্যাপী খাদ্য অপচয়ের চিত্র ভয়ানক। এ বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা 'এফএও' বলছে, খাদ্য অপচয়ের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ক্ষতি হয় প্রায় ৭৫ হাজার কোটি ডলার, নষ্ট হয় প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য, যা বিশ্বের মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অথচ বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়।

ব্রিটেনের আলু অন্তত খাদ্য অপচয়ের বিষয়টি নতুন করে সামনে এলো। এ অপচয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। প্রতিনিয়ত আমাদের দ্বারা সচেতন কিংবা অসচেতনভাবে নানা অপচয় হয়। একটু সচেতন হলেই তা এড়ানো সম্ভব। সবার ক্ষুদ্র অপচয়ও অনেক বড় হিসেবে দেখা দেয়। বিশ্বের নিরন্ন-ক্ষুধার্ত মানুষের কথা ভেবেও কি আমরা অপচয় থেকে বিরত থাকতে পারি না!

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।