Mahfuzur Rahman Manik
খাম্বা উপাখ্যান
জুলাই 18, 2017
প্রতারণার গুটি প্রাণহীন নিষ্কলুষ খাম্বা

খাম্বা উপাখ্যানের যেন শেষ নেই। সময়ে সময়ে ঘটনার রঙ, রস, রূপ বদলায় কিন্তু চরিত্র অভিন্ন। খাম্বা প্রাণহীন নিষ্কলুষ অথচ কলুষিত মানুষ একে নিয়ে খেলে। প্রতারণা করে নিজেদের পকেট ভারী করে। এ প্রতারণার গুটি কেবল খাম্বাই নয় এ রকম আরও নির্জীব পদার্থ। প্রতিনিয়ত এ রকম প্রতারণার নানা বিষয় দেখা যাচ্ছে আমাদের চারপাশে, সমাজে। মানুষের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে!
বিদ্যুতের আলোতে যখন দেশ ভাসছে, তখনও অন্ধকারে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণের পিংড়া গ্রাম। অন্ধকার থেকে হয়তো তারা বিদ্যুতের আলোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্নই কি-না তাদের কাল হলো। যেখানে সরকারই ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছাতে বদ্ধপরিকর, সেখানে মতলবের পিংড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বিদ্যুতের জন্য দালালের কাছে টাকা দিয়ে উল্টো প্রাণনাশের আশঙ্কায় রয়েছেন। ১৪ জুলাই সমকালের লোকালয়ে প্রকাশিত 'খাম্বা দেখিয়ে টাকা আদায়' শিরোনামের প্রতিবেদনটি যা বলছে তাকে দুঃখজনক ছাড়া কীইবা বলার আছে। বৃদ্ধ নুরুল ইসলামরা বলা চলে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন বিদ্যুৎ ছাড়াই। ডিজিটালের এ সময়ে যখন চারদিকে বিদ্যুতের বিস্তার, তখন তার মতো পিংড়া গ্রামের অন্যান্য মানুষও বিদ্যুতের আশায় বুক বেঁধে আছেন। সে আশায় টাকা দিয়েছেন তাও তিন বছর হলো। এতদিনে বিদ্যুৎ তো এলোই না, তার পরিবর্তে এসেছে হুমকি। ইতিমধ্যে দালালচক্র হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। সবই খাম্বার গুণে!
বিদ্যুৎপ্রাপ্তির বিড়ম্বনার ঘটনাটি হয়তো অন্যগুলোর চেয়ে পৃথক কিছু নয়। অনেকে বছরের পর বছর ঘুরে কয়েকবার টাকা দিয়ে পেয়েছেন বিদ্যুতের স্বাদ। দামি জিনিস পেতে যে একটু কাঠখড় পোড়াতেই হয়! কিন্তু মতলবের ঘটনা কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। দালাল ছাড়া সেখানে কাজ হয় না। একজন গ্রাহক দালালের মাধ্যমে না গিয়ে বিদ্যুতের জন্য সরাসরি আবেদন করেন; কিন্তু দালালচক্র অফিস থেকে তার ফাইল গায়েব করে ফেলে। দালালচক্রের খুঁটির জোর কোথায় তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে এলাকায় বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে, বলছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে খাম্বা স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুতের প্রত্যেকটি নতুন সংযোগের জন্য গ্রাহককে গুনতে হয় মিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অথচ মিটার সংযোগের জন্য দিতে হয় ৭০০ টাকা। অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে দালালরা আর সেখানে অভিযোগ, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই দালালদের দ্বারা সব কাজ করাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গ্রাহক থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকার ভাগ যে তারাও পাবেন!
এটাই আসলে খাম্বার গল্প আর বাস্তবতা। সরকার এ রকম অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের কথা চিন্তা করে কম টাকা ধরলেও সেটা পেতে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। না হলে ভোগান্তি। কিংবা দিনের পর দিন ঘোরানো। প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এ রকম ঘোরাঘুরি কে পছন্দ করবে? তাই অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোটা অঙ্কের টাকা তাকে দিতেই হয়। অনেক সেবা প্রতিষ্ঠানের চিত্র এ রকমই।
এদিক থেকে বিদ্যুৎ খাত বলা চলে এগিয়েই আছে। এখানে কাহিনীর শেষ নেই। শেষ নেই নানা অনিয়মের। গ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং, তারপরও বিদ্যুৎহীন এলাকার মানুষ মুখিয়ে আছে বিদ্যুতের জন্য। দেশের ৭৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পায়। বাকিদেরও দ্রুত বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার সরকারের। সবার ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছবে এটা ভালো খবর; কিন্তু মাঝখান থেকে যারা নতুন বিদ্যুতের জন্য মানুষের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাচ্ছে, তাদের দেখবে কে? বিদ্যুতের স্বপ্নটি মানুষের হাতে সহজেই ধরা দিক।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।