Mahfuzur Rahman Manik
হৃদয়ের গল্প
জুলাই 29, 2017

নির্মল সাদা কাগজে অসহায় কালো কালি জীবন্ত হয়ে ওঠে লেখকের তুলির আচড়ে। পাঠকের হৃদয়ে নিশ্চল শব্দ আলোড়িত করে লেখকের লেখা। লেখকের মুন্সিয়ানা, লেখার ঢং, জীবন অভিজ্ঞতা, জানার পরিধি ফুটে ওঠে তার লেখায়। পাঠকের কাছে বিষয় সহজে উপস্থাপনার মাধ্যমেই লেখকের সফলতা।

পড়ার ক্ষেত্রে পাঠকের আগ্রহ থাকে গল্প। কারণ গল্প যে মানুষের জীবনই তুলে ধরে। কোনোটা নিজের সঙ্গে মিলে যায়, কোনোটা কানের পাশ দিয়ে যায়। আবার কোনোটা যেন পরিচিত কারও জীবনকাহিনী। সোহেল নওরোজের 'প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি' ঠিক তেমন গল্পের বই। ১৪টি গল্পের প্রতিটির আয়নায় পাঠক হয়তো নিজের মুখই দেখবেন। কিংবা তা পাঠকের পারিপাশর্ি্বকতারই গল্প। 'রোদচশমা' এ ক্ষেত্রে প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যেসব অন্যায় সংঘটিত হয়, সেগুলো খালি চোখে সহ্য করা সত্যিই কঠিন। তাই গল্পের রাশেদ চোখে কালো চশমা পরে থাকে। আইডিয়া ও গল্পের নামের প্রশংসা এখানেই করতে হবে। তবে জীবনঘনিষ্ঠ বললে 'হিডেন ফোল্ডার' গল্পের কথা বলতেই হবে। গল্পটির কলেবর একটু বড়, তবে রহস্যটা বোধহয় শেষেই। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর যে ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা এবং একে অপরকে গুরুত্ব ও সময় দেওয়ার ব্যাপার রয়েছে, তার বিপরীতটা ঘটলে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। তাতে হিডেন ফোল্ডার তথা কম্পিউটারের মতোই হৃদয়ের গোপন কোনো কুঠুরিতে দুঃখ জমা হয়। সুখের সংসার হলে সেখানে সুখও জমা হতে পারে। অবশ্য 'চুপ' গল্পটিও এদিক থেকে কম শিক্ষণীয় নয়। কাজের ক্ষেত্রে যোগ্যতাই মূল মাপকাঠি; তেলবাজি কখনোই তার সমকক্ষ হতে পারে না। চুপ গল্পের পরতে পরতে পাঠক শিক্ষা পাবেন- 'যোগ্য ও সৎ শত্রুর চেয়ে তেলবাজ ও অসৎ বন্ধু উত্তম হতে পারে না'। বলাবাহুল্য, পাঠক সোহেল নওরোজের বইটিতে সব গল্পই উপভোগ করবেন। গল্পের ভেতরে শিক্ষার বিষয়টি সচেতন পাঠকই ধরতে পারবেন।
সমাজে ক্ষত সৃষ্টি হলে রক্তক্ষরণ হয় লেখকের হৃদয়ে। তার প্রকাশ ঘটে লেখার মধ্য দিয়ে। কবি কবিতা লেখেন, গল্পকার গল্প লেখেন; প্রবন্ধ, নিবন্ধ, বিশ্লেষণেও তা ফুটে ওঠে। হয়তো সে তাগিদ থেকেই সোহেল নওরোজ লিখেছেন 'তনু ফিরে আসার পর'। আমাদের সমাজে তনু, মিতু, আফসানা, রিশা ফিরে আসে না। সময় বয়ে যায়; তাদের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন হয় না। অপরাধী ধরা পড়ে না। তারপরও লেখক তনুর ফিরে আসার গল্প শোনাচ্ছেন! গল্পটা পড়লেই রহস্য বোঝা যাবে। আসলে তনু আসেনি; তনু এসেছে আমাদের থুথু দিতে; গল্পকার তনুর চোখে-মুখে ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যই দেখছেন। আসলে বইটির গল্পগুলো এমনই। লেখার গঠন, শব্দবিন্যাস আর বাক্য বুননও অসাধারণ। সহজবোধ্য করে সব শ্রেণির পাঠকের জন্য গল্পের মতো উপস্থাপন করা হয়েছে। 'খুন হওয়া ছেলেটির মনচিত্র', 'হয়তো হৃদয়ঘটিত নয়', 'আসা-যাওয়ার গান', 'পোট্র্রেট' তথা সব গল্পই ভালো লাগার মতো। কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। একেকটা একেক ঘটনা, নানা স্থান-কাল-পাত্রে বিন্যাস। কোনোটায় ফেসবুক আছে, বই লেখা ও প্রকাশের গল্প আছে, মুক্তিযুদ্ধ আছে, দেশপ্রেম আছে। হাসি আছে, দুঃখ আছে। ভাবনার খোরাক আছে, সমাজের প্রতিচ্ছবি আছে, বিচিত্র চরিত্র আছে, শব্দের খেলা আছে। যে যেভাবে চান তার চাহিদা হয়তো বইটি কিছুটা হলেও পূরণ করবে এটি। সব মিলিয়ে মানুষের জীবনের এক অনন্য সংকলন বইটি।

লেখকের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ এটি। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা হলেও কোথাও পেশার ছাপ পড়েনি। পেশাদার লেখকের গল্পই পাঠক পড়বে। বইটি যে নামে সেটি এক অসাধারণ গল্প। গল্পে নায়ক রবিকে একটি গ্যং পার্টির বস বলা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে নানা বেদনা, টানাপোড়েন তাকে এখানে এনেছে। সস্তা প্রেম বিষয়টিতে তার অন্তর্দহ। এভাবে তৈরি হয়েছে গল্প। গল্পের ভেতরে নানা গল্প। গল্প থেকে গল্পের বই ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’।

 

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।