নির্মল সাদা কাগজে অসহায় কালো কালি জীবন্ত হয়ে ওঠে লেখকের তুলির আচড়ে। পাঠকের হৃদয়ে নিশ্চল শব্দ আলোড়িত করে লেখকের লেখা। লেখকের মুন্সিয়ানা, লেখার ঢং, জীবন অভিজ্ঞতা, জানার পরিধি ফুটে ওঠে তার লেখায়। পাঠকের কাছে বিষয় সহজে উপস্থাপনার মাধ্যমেই লেখকের সফলতা।
পড়ার ক্ষেত্রে পাঠকের আগ্রহ থাকে গল্প। কারণ গল্প যে মানুষের জীবনই তুলে ধরে। কোনোটা নিজের সঙ্গে মিলে যায়, কোনোটা কানের পাশ দিয়ে যায়। আবার কোনোটা যেন পরিচিত কারও জীবনকাহিনী। সোহেল নওরোজের ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ ঠিক তেমন গল্পের বই। ১৪টি গল্পের প্রতিটির আয়নায় পাঠক হয়তো নিজের মুখই দেখবেন। কিংবা তা পাঠকের পারিপাশর্ি্বকতারই গল্প। ‘রোদচশমা’ এ ক্ষেত্রে প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যেসব অন্যায় সংঘটিত হয়, সেগুলো খালি চোখে সহ্য করা সত্যিই কঠিন। তাই গল্পের রাশেদ চোখে কালো চশমা পরে থাকে। আইডিয়া ও গল্পের নামের প্রশংসা এখানেই করতে হবে। তবে জীবনঘনিষ্ঠ বললে ‘হিডেন ফোল্ডার’ গল্পের কথা বলতেই হবে। গল্পটির কলেবর একটু বড়, তবে রহস্যটা বোধহয় শেষেই। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর যে ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা এবং একে অপরকে গুরুত্ব ও সময় দেওয়ার ব্যাপার রয়েছে, তার বিপরীতটা ঘটলে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। তাতে হিডেন ফোল্ডার তথা কম্পিউটারের মতোই হৃদয়ের গোপন কোনো কুঠুরিতে দুঃখ জমা হয়। সুখের সংসার হলে সেখানে সুখও জমা হতে পারে। অবশ্য ‘চুপ’ গল্পটিও এদিক থেকে কম শিক্ষণীয় নয়। কাজের ক্ষেত্রে যোগ্যতাই মূল মাপকাঠি; তেলবাজি কখনোই তার সমকক্ষ হতে পারে না। চুপ গল্পের পরতে পরতে পাঠক শিক্ষা পাবেন- ‘যোগ্য ও সৎ শত্রুর চেয়ে তেলবাজ ও অসৎ বন্ধু উত্তম হতে পারে না’। বলাবাহুল্য, পাঠক সোহেল নওরোজের বইটিতে সব গল্পই উপভোগ করবেন। গল্পের ভেতরে শিক্ষার বিষয়টি সচেতন পাঠকই ধরতে পারবেন।
Continue reading