Mahfuzur Rahman Manik
মাছের সংবাদ-দুঃসংবাদ
এপ্রিল 23, 2017
মাছ ধরছে মানুষ

বৈশাখ এসেছে প্রায় দেড় সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে। বৈশাখের সঙ্গে নানাভাবে মাছের প্রসঙ্গ আসে। এই সময়ে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ আর ইলিশের বড় হওয়ার সময় বলে অন্য মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে। এ বছর ইলিশের পরিবর্তে সরপুঁটি ও পান্তা ভাত দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। অবশ্য কেবল বৈশাখই নয়, মাছের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীরে। ভাতের সঙ্গে মাছ ছাড়া যে অনেকের চলেই না। 'মাছে-ভাতে বাঙালি' কথাটি তো আর এমনিই আসেনি। বলাবাহুল্য, আমরা যেমন মাছ খাচ্ছি তেমনি এখানে মাছের উৎপাদনও কম নয়। গত জুলাই মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। এর আগের বছর অবস্থান ছিল পঞ্চম। এটি অবশ্য স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনের হিসাব। হিসাবমতে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টন স্বাদু পানির মাছ উৎপাদিত হয়েছে। আর ভারত একই সময়ে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদন করেছে ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার টন। মাছ উৎপাদনে ভারতের অবস্থান তৃতীয়।
দেশের মাছের এ উৎপাদন নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। দিন দিন উৎপাদন বাড়ছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন, মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ হতে পারে এক নম্বর। এমনকি এ নিয়ে যখন নানা গবেষণা ও মাতামাতি চলছে, তখন একটি খবর আমাদের নতুন করে ভাবাবে নিশ্চয়। ১১ এপ্রিল দ্য কনভারসেশন গ্গ্নোবাল সূত্রে হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি গবেষণার প্রতিবেদন বলছে, 'ইন বাংলাদেশ, পিপল আর ইটিং মোর ফিশ বাট গেটিং লেস নিউট্রিশন ফ্রম ইট.' অর্থাৎ বাংলাদেশে মানুষ মাছ খাচ্ছে বেশি কিন্তু পুষ্টি পাচ্ছে কম। পিএলওএস-ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত দেশি-বিদেশি নয়জনের গবেষণায় ফুটে ওঠে এ চিত্রগবেষকদের অন্যতম দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি গবেষক জেসিকা বোগার্ড তা নিয়ে লিখেছেন দ্য কনভারসেশন ডটকমে। তিনি বলছেন, ২০ বছর আগের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ এখন ৩০ শতাংশ বেশি মাছ খায়। কিন্তু মাছে যে পরিমাণ পুষ্টি থাকে, তার চেয়ে কম পুষ্টি তারা পাচ্ছে।
আমরা জানি, মাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর আমিষ জাতীয় খাদ্য। এক হিসাবে দেখা গেছে, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণীজ আমিষের ৫৮ শতাংশ আসে মাছ থেকে। কিন্তু গবেষণা প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, আমরা পুষ্টি কম পাচ্ছি। এর কারণও দেখিয়েছেন গবেষকরা। এখানে দু'ভাবে মাছ উৎপন্ন হয়। একটি হলো প্রাকৃতিকভাবে স্বাভাবিক উপায়ে প্রাপ্ত মাছ, যাকে ইংরেজিতে বলে ক্যাপচার ফিশারিজ। আরেকটি হলো পরিকল্পিত উপায়ে মৎস্য পালন, যাকে বলা হয় অ্যাকুয়াকালচার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপচার ফিশারিজে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরা হয়, যেখানে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ করা হয় না। তা সমুদ্র, নদী, হাওর-বাঁওড় যেমন হতে পারে; তেমনি পুকুর, খাল-বিলও হতে পারে। আর অ্যাকুয়াকালচার বা ফিশ ফার্মিং হলো পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ। একেক মাছের পানি, খাবার ও পরিবেশ একেকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মৎস্য উৎপাদন ও খাওয়ার দিক থেকে এখন অ্যাকুয়াকালচারেরই প্রাধান্য। আশির দশকে বাংলাদেশে অ্যাকুয়াকালচার শুরু হয়। তা দিন দিন ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এখন অ্যাকুয়াকালচার উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের ষষ্ঠতম দেশ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছ খাওয়ার পরিমাণ কমেছে ৩৩ শতাংশ। বেড়েছে অ্যাকুয়াকালাচারের মাছ খাওয়ার পরিমাণ। এতে মানুষ মাছ থেকে পুষ্টি পাচ্ছে কম। কারণ অ্যাকুয়াকালচারে উৎপাদিত মাছে পুষ্টি কম থাকে। এমনিতেই পুষ্টিহীনতা আমাদের অন্যতম সমস্যা। অ্যাকুয়াকালচারে উৎপাদিত মাছ যখন আমরা বেশি খাচ্ছি, তাতে এ সমস্যা আরও বাড়বে। এ জন্য গবেষকদের পরামর্শ হলো, পুষ্টির বিষয়টি সামনে রেখেই অ্যাকুয়াকালচারে মাছ উৎপাদন করা প্রয়োজন। তাতে মানুষের মৎস্য চাহিদাও মিটবে, পুষ্টিও নিশ্চিত হবে।

 

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।