Mahfuzur Rahman Manik
বায়ুদূষণ রোধে স্কুলে ফেস মাস্ক
এপ্রিল 4, 2017
শিশুর ফুসফুসের 'কার্যকারিতা কমাচ্ছে' ঢাকার বায়ুদূষণ

ঢাকার মতো শহরে যাদের বাস তারা কি প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারেন? বায়ুদূষণে যে শহরের মানুষ বিপর্যস্ত। শিশুরা বিপর্যস্ত। প্রতিবেদন বলছে, বায়ুদূষণের দিক থেকে এশিয়ার দ্বিতীয় শহর ঢাকা। সেখানে আমরা কীভাবে শ্বাস নেব? অথচ এ দূষণ থেকে বাঁচতে পদক্ষেপ যৎসামান্য। শিশুদের বাঁচাতেও আমরা নির্বিকার। এ ব্যাপারে অন্তত খোঁজ নেওয়া যায় অন্যরা কী করছে। উন্নত বিশ্বে যেখানে বায়ুদূষণ বেশি, সেখানে তারা কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের স্কুলের একটি পদক্ষেপ আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। ৩১ মার্চ বিবিসির একটি প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে লন্ডনের একটি প্রাইমারি স্কুল অভিভাবকদের তাদের সন্তানের জন্য ফেস মাস্ক কিনতে বলেছে। সেখানকার হিসাব বলছে, লন্ডনের প্রায় ৪৫০টি স্কুল বায়ুদূষণ অনিরাপদ অবস্থায় পেঁৗছেছে। শিক্ষার্থীদের বায়ুদূষণ থেকে নিরাপদ করতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফেস মাস্ক ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্কুলগুলো অভিভাবকদের ডেকে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব ও ফেস মাস্ক ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে বিশেষ বক্তৃতা প্রদান করবে। এমনকি স্কুলগুলো বায়ুদূষণের ব্যাপারে মেয়র অফিসের সঙ্গে কাজ করবে বলেও বলছে প্রতিবেদনটি। শিশুদের বায়ুদূষণ নিয়ে লন্ডনের স্কুল কর্তৃপক্ষ যতটা উদ্বিগ্ন, আমাদের উদ্বেগ এর চেয়েও বেশি হওয়া প্রয়োজন। কারণ ঢাকার তুলনায় লন্ডনের বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক কম। ঢাকায় বায়ুদূষণের চিত্র অরও আগে থেকেই নানাভাবে উঠে এসেছে। কয়েক বছর ধরে এর ক্ষতিকর প্রভাবের ওপর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিবেদন আমরা দেখে আসছি। এর মধ্যে বোধ হয় সবচেয়ে ভয়াবহ খবর হলো, শিশুর ফুসফুসের 'কার্যকারিতা কমাচ্ছে' ঢাকার বায়ুদূষণ। বিবিসি বাংলায় ১০ মার্চ প্রকাশিত খবরটি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) একটি গবেষণা সূত্রে বলছে, বাপা ঢাকা শহরের ছয়টি স্কুলে শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতার ওপর এক গবেষণা চালায়। তাতে দেখা যায়, ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণ মাত্রায় কাজ করছে না। ফুসফুসের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ করছে। তারা বলছে, বায়ুদূষণের কারণেই এ পরিস্থিতি হয়েছে; যাদের বেশিরভাগের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। ফুসফুস পরিবেশের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। ট্রাফিক জ্যাম, গাড়ির ধোঁয়া, বাতাসে ভেসে থাকা ধূলিকণা ইত্যাদি ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। শ্বাস নেওয়ার সময় ছোট আকারের ধূলিকণা ফুসফুসে প্রবেশ করে। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসনালিতে তা জমতে জমতে ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর

স্কুলে ফেস মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন

সঙ্গে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং নানা ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত গুরুতর রোগের ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাঁচ বছরের নিচে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার শিশুর অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ুদূষণজনিত রোগ-ব্যাধি। আমাদের শিশুরা যখন বায়ুদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার, তখন নির্বিকারভাবে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাদের রক্ষায় এবং সার্বিকভাবে বায়ুদূষণ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমরা অন্তত লন্ডনের মতো ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারি। স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলে তারা সহজেই বিষয়টি বুঝবেন, সন্তানের ভালো থাকার স্বার্থে ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হবেন। ফেস মাস্ক এখানে সহজলভ্য, দামও বেশি নয়। শিশুরা অন্তত স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে বাইরের ধূলিকণা ও গাড়ির ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাবে। তাতে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব তাদের ওপর কিছুটা হলেও কমবে।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।