Mahfuzur Rahman Manik
... ছাড়া চলেই না!
ফেব্রুয়ারী 4, 2017

শূন্যস্থানে হয়তো অনেক কিছুই বসানো যাবে। সত্যিকারার্থেই এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ছাড়া চলে না। যেমন বাঁচতে হলে খেতে হবে, ঘুমাতে হবে, পোশাক লাগবে, থাকার ব্যবস্থা লাগবে। কিন্তু দিন দিন এমন বিষয়ও অনেকের আবশ্যকীয় তালিকায় চলে এসেছে, যেটা হয়তো কিছু দিন আগেও নিত্যব্যবহার্য ছিল না। এখন সেসব ছাড়া যেন চলেই না। অনেকের ফেসবুক ছাড়া চলে না। কারও সবসময় ইন্টারনেট লাগবেই। মোবাইল ছাড়াও যে অচল। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান অনলাইনের লাইফ অ্যান্ড স্টাইল বিভাগে 'হোয়াট আই এম রিয়েলি থিংকিং'_ সতিকারার্থেই 'আমি কী ভাবছি' শিরোনামে অনুবিভাগটি দেখছি আর আমাদের সাধারণ কিছু না থাকার 'অসাধারণ' অভিব্যক্তির কথা ভাবছি।

আসলে তথ্যপ্রযুক্তিসহ কিছু বিষয়ের ওপর মানুষ এত বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, এগুলো অল্পসময় হাতছাড়া হলেও যেন কী অস্বস্তি। হয়তো আপনি বাজারে এসেছেন অল্প সময়ের জন্য, মোবাইলটি আনতে ভুলে গেছেন। সারা পথ কিংবা যতক্ষণই বাজারে থাকছেন আপনার মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই বা মারাত্মক ভুল করে ফেলেছেন, ভুল করার জন্য আফসোসের শেষ নেই। আবার ধরুন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ইন্টারনেট নেই। মনে হবে যেন ইন্টারনেট না থাকার কারণে সব কাজ আটকে আছে। ইন্টারনেট ছাড়া যেন এক মূহুর্তও চলে না। বিদ্যুতের অবস্থাও তথৈবচ। বিদ্যুৎ না থাকলে তো নগরজীবন অচল।

এমনকি গ্রামেও অনেকে পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। হয়তো অনেক ক্ষেত্রে এগুলো ছাড়া চলে না; বর্তমান সময়টাই বলা চলে এ রকম। কিন্তু কোনো কিছুর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীলতা কিংবা অতিরিক্ত আসক্তির ফল সবসময় ভালো নয়। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায়, অনেকে বলেনও_ কোনো কিছু পাওয়ার আশা ভালো; কিন্তু অতিরিক্ত আশা নয়। আপনি আশা করলেন, হলো না। তাতে হয়তো অল্প কষ্ট পাবেন। কিন্তু অতিরিক্ত আশা করে বসে আছেন। অথচ হলো না, তখন সেটা আপনার মাঝে অনেক বেশি হতাশার সৃষ্টি করবে। আপনার না পাওয়ার কষ্ট হয়তো আরেকটি অঘটন ঘটাতে পারে।

আসলে জীবনটা সবসময় সরলরৈখিক নয়। জীবনের রেখা কারও হয়তো একেবারে উর্ধমুখী নয়। কারও প্রথমে নিম্নগামী, তারপর ঊর্ধ্বমুখী। কারওটা প্রথমে ঊর্ধ্বমুখী, তারপর নিম্নগামী। কেউ হয়তো প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী-নিম্নগামিতার মধ্য দিয়ে যায়। সড়কের সব রাস্তা যেমন একেবারে মসৃণ নয়, আঁঁকাবঁাঁকা, এবড়োখেবড়ো রয়েছে, তেমনি জীবনেও উত্থান আছে, পতন আছে। আরাম আছে, কষ্ট আছে। হাসি আছে, কান্না আছে। প্রাপ্তি আছে, অপ্রাপ্তি আছে। এটাই তো জীবন।

দৈনন্দিন জীবনও যে একই নিয়মে চলে। ফলে মানুষ সবসময় বিকল্প রাখে কিংবা বিকল্প ভাবে। বিদ্যুতের বিকল্প কারও কাছে জেনারেটর, কারও জন্য চার্জলাইট, কারও আবার মোমবাতি-হারিকেন ইত্যাদি। হয়তো আপনার দামি স্মার্টফোনটা হারিয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আপনি বিকল্প হিসেবে যোগাযোগের জন্য কম দামি ফিচার ফোন হলেও ব্যবস্থা করবেন। কতক্ষণ ইন্টারনেট, ফেসবুক নেই তো কী হয়েছে। বিকল্প হিসেবে অফলাইনের কোনো কাজ করুন। এরকম জীবনের সব বিষয়ই। যেটা চলে গেছে, যেটা নেই, তা নিয়ে বসে থাকার মানে নেই।

এখানে ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি হয়তো উদাহরণমাত্র। অনেকের কাছে হয়তো প্রযুক্তি নেই। কিন্তু তার জীবনেও এরকম কিছু বিষয় থাকতে পারে যা সাময়িকভাবে না হলেও চলে। একইসঙ্গে একে ব্যক্তিগত জীবনে পাই না-খাই না বলে হা হুতাশের সঙ্গে মেলানো যায়। এরকম না পাওয়ার আক্ষেপ নয়। কোনো বিষয়েই এমন 'চলেই না' নয়। ধৈয্য ধরুন, যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। এটাই জীবনের সৌন্দর্য্য।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।