Mahfuzur Rahman Manik
কাজের মাঝে ঘুম!
জানুয়ারী 4, 2017
জাপানের ইনেমুরি (কাজের সময় ঘুম)
জাপানের ইনেমুরি (কাজের সময় ঘুম) কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক

জনসমক্ষে ঘুমানোর চিত্র বিচিত্র নয়। কোনো অনুষ্ঠানে, যানবাহনে, অফিসে বা ক্লাসে সবার সামনে অনেকেই ঘুমান। ঘুমের চাহিদা অনেক সময় অগ্রাহ্য করা যায় না। কিন্তু যেখানে-সেখানে ঘুমানোকে ভালোভাবে দেখা হয় না। উত্তর কোরিয়ায় তো এক অনুষ্ঠানে ঘুমানোর জন্য শীষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন কিম জং উন। তবে সেটি নাকি কিমের বক্তৃতা মনোযোগ দিয়ে না শোনার শাস্তি ছিল। ছোটবেলায় দেখেছি, শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষার্থী ঘুমিয়ে পড়লে শিক্ষক কানে ধরে দাঁড় করাতেন। সংসদে বা অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা। মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানে ঘুমানোর খবর তো সংবাদমাধ্যমের হট কেকই বলা যায়। জাপানের চিত্র অবশ্য উল্টো। সেখানে বরং জনসমক্ষে ঘুমালে কেউ তো কিছু মনেই করে না, উল্টো এ ঘুমকেই দেখা হয় বিচক্ষণতার প্রতীক হিসেবে। নতুন বছরে বিবিসি ফিউচার ২০১৬ সালের কয়েকটি সেরা ফিচার-প্রতিবেদন নতুন করে সামনে আনে। যার অন্যতম ফিচার 'দ্য জাপানিজ আর্ট অব (নট) স্লিপিং' অর্থাৎ জাপানের (না) ঘুমানোর সংস্কৃতি। ব্র্যাকেটে 'না' শব্দটির রহস্যের কথা বলছে ফিচারটি, যার শুরুই হয়েছে এভাবে_ জাপানিরা ঘুমায় না, হালকা নিদ্রাও যায় না; তবে তারা ইনেমুরি করে। ইনেমুরির কথা অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন। জাপানিরা একে কাজের সময় ঘুম যাওয়া অর্থে ব্যবহার করেন। নিউইয়র্ক টাইমসের ১৬ ডিসেম্বরের (২০১৬) এক প্রতিবেদনেও সে কথা এসেছে। শিরোনাম করা হয়েছে_ জাপানে জনসমক্ষে ঘুম অধ্যবসায়ের লক্ষণ। সেখানে হঠাৎ কাজের মধ্যে যারা ঘুমিয়ে পড়ে, তাদের অধিক দক্ষ হিসেবে দেখা হয়। তারা মনে করছে, কাজ করতে করতে ক্লান্ত হওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছে। বিবিসির ফিচারটির লেখক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার ড. বিগিটে স্ট্যাগার 'ইনেমুরি' নিয়ে বইও লিখেছেন। তিনি এর অর্থ করেছেন, উপস্থিত থেকে ঘুমানো। যেমন কেউ অনুষ্ঠানে বা অফিসে উপস্থিত; কিন্তু ঘুমাচ্ছেন। তার মতে, জাপানের এ সংস্কৃতি অন্তত এক হাজার বছরের। এটি কেবল অফিসেই নয় বরং ইনেমুরি হতে পারে কোনো বড় দোকানে, ক্যাফেতে, রেস্টুরেন্টে কিংবা ব্যস্ত সড়কের পাশে কোনো মানুষের বসার জায়গায়।
ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ানও ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বলা চলে একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে গার্ডিয়ান আরও যোগ করছে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানে তার কর্মীদের অফিসে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন গুগলের প্রধান অফিসের চিত্র দেখিয়েছে। যেখানে ঘুমানোর জন্য 'ন্যাপ পড' রয়েছে। সেখানে চাইলে কর্মীরা ঘুমাতে পারেন। এমনকি অ্যাপেল, নাইক ও হাফিংটন পোস্টও কর্মীদের জন্য এ রকম ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছে। গার্ডিয়ান বলছে, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট এংলিয়ায়ও ছাত্রদের জন্য ঘুমের ব্যবস্থা রয়েছে।

গুগল-ফেসবুক অফিসে রয়েছে ঘুমানোর ব্যবস্থা
গুগল-ফেসবুক অফিসে রয়েছে ঘুমানোর ব্যবস্থা

এটা ঠিক, ঘুম মানুষকে চাঙ্গা করে, ক্লান্তি দূর করে। কাজের চাপের মধ্যে ১০-৩০ মিনিটের ঘুম আপনাকে নতুন উদ্যমে কাজটি করতে সাহায্য করবে। শরীর তো আর রোবট নয়। একনাগাড়ে কাজ করতে গেলে যেমন শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি কাজের মানও হয়তো কাঙ্ক্ষিত হয় না। মনোযোগ দিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজন বিশ্রাম ও ঘুম। আর এ জন্যই প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ছুটির ব্যবস্থা রাখা হয়।
জাপানে যেখানে কাজের মাঝখানে ঘুম কঠোর পরিশ্রমের চিহ্ন, আমাদের এখানে সেটি আলস্যতার কারণ হিসেবে বিবেচিত। জাপানে একে উৎসাহিত করা হয় আর আমরা দেখি নেতিবাচক দৃষ্টিতে। তবে এটা তো ঠিক, কাজের মাঝে যখন কারও তন্দ্রা আসে, তখন না হয় কাজ আর না হয় ঘুম। সে সময় ঘুমিয়ে নেওয়াই বোধ হয় উত্তম দাওয়াই। জাপানিরা হয়তো সে অনুশীলনই করেন।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।