Mahfuzur Rahman Manik
কথা কম, কাজ বেশি
সেপ্টেম্বর 22, 2016

অনেকে কম কথা বলেন, কাজ বেশি করেন। কেউ কথা বেশি বলেন, কাজ কম করেন। অনেকে যতটুকু বলেন, ততটুকু করেন। কেউ আবার না করেও বলেন। আর কেউ না বলেও করেন। এই কথা ও কাজের ক্ষেত্রে কে ভালো কে মন্দ, তা সবাই জানেন। তার পরও একটা মান বা স্ট্যান্ডার্ড বোধহয় আমাদের চারপাশ থেকেই বোঝার আছে।
রাস্তায় চলতে গেলে কোথাও 'বিপদ' লেখা থাকলে কেউ আর অগ্রসর হন না। ছোট্ট 'বিপদ' শব্দই সবাইকে সতর্ক করে দেয়; প্রত্যেকে বিকল্প দীর্ঘ পথ ধরেন। কাউকে দূর থেকে দেখে আসুন বললে কিংবা ছোট্ট ইশারা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনেক পথ ভেঙে চলে আসেন। পানি দাও বললে নির্দেশিত ব্যক্তি গ্গ্নাস হাতে নিয়ে পানির আধার বা জগ থেকে পানি ঢেলে ব্যক্তিকে দেন। 'দ্রুত' একটি শব্দ হলেও কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করতে ব্যক্তিকে হয়তো চেষ্টা করতে হয় অনেকক্ষণ। একটা শব্দে কেউ দীর্ঘশ্বাস নেন, কেউ হয়তো এক শব্দের কোনো কথায় হাসতে থাকেন অনেক সময় ধরে কিংবা কাঁদেন দীর্ঘক্ষণ।
একইভাবে ছোট্ট চিহ্নও প্রত্যেককে পরিচালিত করে। সড়কে লালবাতির সিগন্যালে যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। পরবর্তী হলুদ ও সবুজ সিগন্যালের জন্য দাঁড়িয়েই থাকে। ধূমপান নিষিদ্ধের চিহ্ন দেখে ব্যক্তি বুঝে নেয় এখানে ধূমপান করা যাবে না। ক্রসচিহ্ন ব্যক্তিকে সতর্ক করে। মোবাইলের রিসিভ বাটনে একবার চাপ দিয়েই অনেকে অবিরতভাবে কথা বলেন মিনিটের পর মিনিট। রাতের ঘুম বললে আমরা বুঝে নিই নূ্যনতম চার-পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ ঘুম।
এই ছোট শব্দ, ছোট চিহ্ন আর ছোট কথায় দীর্ঘ বিষয় বোঝানো দিয়েই তো আমরা সারকথা বুঝতে পারি_ কম কথা, বেশি কাজ। মানুষের জীবন একটি নির্দিষ্ট বয়সের ফ্রেমে আবদ্ধ। জীবনের সময় কম, কাজ বেশি। মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ যা সময় পায় তা দিয়ে অনেকে বেঁচে থাকেন তার জীবনের চেয়েও কয়েকশ' গুণ বেশি সময়। কেউ সে অনুযায়ী কম কিংবা কারও কথা মৃত্যুর পর বলা চলে শোনাই যায় না। মৃত্যুর পরও যে মানুষ বেঁচে থাকে তা তো তার কাজের দ্বারাই। কম কথা বলে যে কাজ করে যায়, তার কাজই তাকে মানুষের কাছে স্মরণীয় করে রাখে। কথার মানুষ আর কাজের মানুষ এক নয়। অনেকে নিভৃতচারী, কেবল কাজই করে যান। কম কথা বলেন, কম প্রচার-প্রচারণা চান। আপাতদৃষ্টিতে তাদের কেউ অনেকটা অবহেলিত কিংবা তার সময়ে তেমন দাম পান না। কিন্তু মৃত্যুর পর ঠিকই তার কাজ তাকে অবিস্মরণীয় করে রাখে। কাজ করলে তা বলা দরকার, তাতে হয়তো মানুষ বুঝতে পারে। কাজ না করে বলাটা নিশ্চয়ই সমীচীন নয়। অল্প করে বেশি বলাও উচিত নয়।
বলা সহজ করা কঠিন। আর করাটাই তো বড়ত্ব। কবি 'কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হওয়া'র কথা বলেছেন। বললেও কম বা যথার্থ বলা। আকাশ শব্দটা যত ছোট তার বিশালতা কল্পনার চেয়েও বড়। সমুদ্র তিন শব্দের হলেও তার ব্যাপকতা অসীম।
আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতি, চারপাশ, জীবনযাপনে, চলতে-ফিরতে ছোট কথা, চিহ্ন ও ছোট বিষয়গুলো যেভাবে বড় বিষয় বোঝাচ্ছে, তার থেকে ও তো আমরা শিক্ষা নিতে পারি।

 

 

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।