Mahfuzur Rahman Manik
এই তবে ছাগল!
জুলাই 14, 2016

Goat-friendকাউকে বোকা বোঝানোর জন্য অনেকে সাধারণত ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেন। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করারও মোক্ষম শব্দ বোধ হয় ছাগল। ছাগলকে আমরা বোকা ভাবলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছাগল আসলে বুদ্ধিমান। আমরা যতটা বুদ্ধিমান ভাবি, ছাগল তার চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান। গবেষণায় এও দেখা গেছে, ছাগল মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ফলে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছাগল মানুষের সেরা বন্ধু। সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান গবেষণার খবরে বলেছে, নো কিডিং, ম্যান'স নিউ বেস্ট ফ্রেন্ড ইজ এ গোট; ইয়ার্কি নয়, মানুষের নতুন সেরা বন্ধু একটি ছাগল। আর নিউজউইক লিখেছে, গোটস :ম্যান'স নিউ বেস্ট ফ্রেন্ড? সায়েন্স সেইস ইট'স পসিবল। বিজ্ঞান যে বলছে এটা সম্ভব, তার প্রমাণও দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল বায়োলজি লেটার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রশিক্ষণরত কয়েকটি ছাগলের সামনে একটি করে খাবারের বাক্স রাখা হয়, একটি বাদে বাকি সবক'টি ছাগলই কয়েকবারের চেষ্টায় বাক্সগুলো খুলতে সক্ষম হয়। তবে তার আগে দুয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা কাছে থাকা মানুষের দিকে তাকায়। তাদের চাহনিতে ছিল বন্ধুত্বের আহ্বান। মানুষের দিকে তাকানোর মানে হচ্ছে তারা খুলতে ব্যর্থ। তাই সহযোগিতা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা এও বলছেন, ঠিক একইভাবে তাকায় কুকুরও। ছাগল যখন মানুষের দিকে তাকায়, তার স্থিরদৃষ্টিতেই উভয়ের মাঝে একটি যোগাযোগ তৈরি হয়। ছাগল প্রভুভক্ত। তার চাহনি, লেজ নাড়াচাড়া করা কিংবা ডাকলে কাছে আসার মাধ্যমে ছাগল তার প্রমাণ দেয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেন লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা বলছেন, প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষ ছাগল পালন শুরু করে। আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামে ছাগল পালন জনপ্রিয়। ছাগল নানাভাবেই মানুষের উপকার করে। একদিকে যেমন ছাগলের দুধ সুস্বাদু ও উপকারী। তার ওপর ছাগল পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ছাগলের গোশতও পুষ্টিকর। ছাগল একই সঙ্গে অনেকগুলো বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কোরবানির পশু হিসেবে ছাগলের কদরও যথেষ্ট। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ছাগল রফতানি করা যায়। আমাদের ছাগল বিশেষত ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের (কালো জাতের ছাগল) চামড়া এবং গোশতের বিদেশে প্রচুর চাহিদা আছে। এমনকি অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ছাগলের মাধ্যমে অনেকের আত্মকর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হতে পারে।
সেই ছাগলকে এখন বিজ্ঞানীরা নতুন করে যখন সেরা বন্ধু হিসেবে আবিষ্কার করেছেন, আমাদের সমাজে যেখানে ছাগল বলা চলে গালির মতো, সেখানে এ আবিষ্কার কোনো সুফল বয়ে আনবে কি-না তা বোদ্ধারাই ভালো জানেন। তবে ছাগল যে আমাদের ধারণার চেয়েও বুদ্ধিমান, এ তথ্য কিছুটা হলেও অনেককে প্রশান্তি দেবে। মাহাত্মা গান্ধী নোয়াখালীতে দাঙ্গাপীড়িত এলাকায় শান্তি স্থাপনে ছাগলসহ এসেছিলেন। তিনি ছাগলের দুধ পান করতেন। ফলে ছাগল সেরা বন্ধু হতেই পারে। নিরীহ ও শান্তিপূর্ণ প্রাণী ছাগলের সঙ্গে বন্ধুতা কাউকে আর কিছু না শেখাক, অন্তত কারও ক্ষতি না করার শিক্ষা হয়তো দেবে। ছাগলের নিষ্পাপ চাহনির বন্ধুতার বার্তা, সহযোগিতার আহ্বান সত্যিই অনন্য। অসহিষ্ণুতার এ সময়ে বুঝি ছাগল থেকেই শিক্ষা নিতে হবে আমাদের!

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।