Mahfuzur Rahman Manik
সিভি অব ফেইলিয়রস-ব্যর্থতার সিভি!

CV-Failuresসিভি বা কারিকুলাম ভিটায় জীবনের বৃত্তান্ত লিখতে সবাই সচেতন। সিভির সঙ্গে যে অনেক কিছু জড়িত। আপনার স্বপ্নের চাকরিটা হয়তো সিভির কারণেই হাত ফসকে বের হয়ে যেতে পারে। সুন্দর সিভি না হলে কেউই হয়তো আপনাকে ডাকবে না। ভালো একটা সিভি তৈরি করতে তাই সবাই গলদঘর্ম হন। সেখানে নেতিবাচক বা ব্যর্থতার কথা লেখা তো দূরের কথা, ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা ইতিবাচক দিক লিখতে আমরা ব্যস্ত। সবাই ধরে নেন, সিভি মানেই ব্যক্তির ইতিবাচক ধারণার উপস্থাপন। যেখানে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব সফলতা, অর্জন, দক্ষতা লেখা হবে। সিভির এই প্রচলিত ধারণাকে বলা চলে একেবারে উল্টিয়েই দিয়েছেন জোহানস হাউসোফার। ৩০ এপ্রিল ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে 'সিভি অব ফেইলিয়রস' নামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক জোহানস হাউসোফার। ২৩ এপ্রিল তিনি টুইট করেছেন, নিউ 'পাবলিকেশন' :মাই সিভি অব ফেইলিয়রস! অর্থাৎ নতুন 'প্রকাশনা' :আমার ব্যর্থতার সিভি। টুইটের সঙ্গে তিনি ব্যর্থতার সে সিভির লিঙ্কও দিয়ে দেন। ২ পৃষ্ঠার সে সিভিতে তিনি তার ক্যারিয়ারের নানা ব্যর্থতার বিষয় তুলে ধরেন। পিএইচডি, গ্র্যাজুয়েট কোর্স ও বিএ ডিগ্রির জন্য অ্যাপ্লাই করেও কয়েক জায়গায় তিনি সুযোগ পাননি। কয়েক জায়গায় ফেলোশিপ, শিক্ষকতার চাকরি, স্কলারশিপ, রিসার্চ ফান্ড পাননি। এসব বিষয় তিনি ব্যর্থতার সিভিতে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, ডিগ্রি প্রোগ্রামস আই ডিড নট গেট ইনটু, একাডেমিক পজিশনস অ্যান্ড ফেলোশিপস আই ডিড নট গেট, অ্যাওয়ার্ডস অ্যান্ড স্কলারশিপস আই ডিড নট গেট ইত্যাদি।
সে সিভি অব ফেইলিয়রস ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। গার্ডিয়ান যেমন এটা খবর হিসেবে প্রকাশ করে, তেমনি কয়েকজনের মতামতও ছেপেছে। বিবিসি লিখেছে, "প্রিন্সটন প্রফেসরস 'সিভি অব ফেইলিয়রস' গোজ ভাইরাল।" এর বাইরেও নানা প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে আসে খবরটি। অনেকে টুইটারে এ সিভির জন্য জোহানস হাউসোফারকে ঐকান্তিকভাবে স্বাগত জানান। তবে জোহানস তার সিভি অব ফেইলিয়রস লিখেছেন, এটা কেবল তার আইডিয়া নয়। তিনি ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের লেকচারার মেলানি আই স্টিফেনের একটি নিবন্ধ পড়ে বিষয়টিতে উদ্বুদ্ধ হন। এ ছাড়াও এর আগে কয়েকজনের সিভি দেখেও তার সিভি অব ফেইলিয়রস লেখার আগ্রহ জন্মে। জোহানস অবশ্য এটাও বলেছেন, ব্যর্থতার যেসব বিষয় তার স্মরণে ছিল সেগুলোই তিনি লিখতে পেরেছেন, এর বাইরেও হয়তো অনেক বিষয় রয়েছে
Johannes_Haushofer_CV_of_Failures_Page_1হঠাৎ করে এই সিভি অব ফেইলিয়রস এ রকম আলোচনায় আসার কারণ হয়তো গার্ডিয়ানের সোনিয়া সোধার লেখার শিরোনাম, 'ওনলি সাকসেসফুল পিপল ক্যান অ্যাফোর্ড অ্যা সিভি অব ফেইলিয়র' অর্থাৎ কেবল সফল মানুষরাই ব্যর্থতার সিভি করার সামর্থ্য রাখে। সত্যিই তাই। আমরা জানি, জোহানসের মতো সব সফল মানুষেরই জীবনে এ রকম নানা ব্যর্থতা রয়েছে। ব্যর্থতায় যারা হাল ছেড়ে দেয় না, ভেঙে পড়ে না তারাই সফল হতে পারে। কারও হাতে সফলতা খুব সহজে ধরা দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা সহজে আসে না। এজন্য যেমন ধৈর্য, পরিশ্রম, অধ্যবসায়, লেগে থাকা দরকার, তেমনি প্রয়োজন আত্মসমালোচনারও। সিভি অব ফেইলিয়রস হয়তো তা-ই। ফলে প্রত্যেকের যেমন সফলতার সিভি থাকা চাই, তেমনি ব্যর্থতার সিভিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।