Mahfuzur Rahman Manik
গ্রাম জীবনের উপাখ্যান
মার্চ 4, 2016
Cover-Mayar-Kajolবজর উদ্দির পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও হাবিবুর রহমান জুয়েলের মায়ার কাজল নির্বিশেষে গ্রামের মানুষের জীবন ও সংগ্রামের এক অনুপম চিত্র। যদিও বজর উদ্দির চরিত্র নেতিবাচক। জুয়াখোরের কারণে একটি পরিবারে কেমন বিভীষিকা নেমে আসতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ বজর উদ্দি। জুয়ার টাকা জোগাড় করার জন্য যে কেবল স্ত্রী রাবেয়ার যত্নে লালিত হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র গোপনে বিক্রিই করেনি, কাফনের টাকাও গায়েব করেছে। এমনকি নিজের ছেলে সন্তানকে বিক্রি করতেও ক্ষান্ত হয়নি। জুয়ার নেশা মানুষকে কতটা পশুতে পরিণত করে তা উপান্যসটি পড়লে পাঠক বুঝবেন। কোনো কোনো দিন চুলায় দু'বেলা হাঁড়িও চড়ে না, অথচ নির্বিকার বজর উদ্দি জুয়ার আসরে মশগুল।
তার পরও মায়াই প্রধান। মায়ার কাজল যেন তা-ই বারবার প্রমাণ করেছে। বজর উদ্দির হাতে টাকা নেই, মাথায় রাগ। রাবেয়াকে মারতে গিয়ে লুঙ্গি ছিঁড়ে ফেলে। রাবেয়ার খেদ নেই। বরং বলে 'লুঙ্গিডা খুইলা রাখেন, ছিলাইয়া দিমু'। বজর উদ্দি সে মায়া বোঝে না। জুয়াই তার সব। সে বোঝে না, তার জন্য সন্তানরা সমাজে মুখ দেখাতে পারে না। রাবেয়া মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকম খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে। বজর উদ্দি পরিবারের এ দুঃসময়ে একজনই বোধহয় সহানুভূতিশীল, সে তার ভাইয়ের ছেলে হারুন। এর পেছনের 'কিন্তু'টা যে বজর উদ্দির মেয়ে বিলু।হারুন দেখতে-শুনতে ভালো। বিলুকে তার ভালো লাগে। সে কথা বলেও। বিলুরও ভালো লাগে হারুনকে। এক সুযোগে হারুন বিলুকে আগুন নিয়ে শপথও করায়_ অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। যদিও বিলু জানে, তারা গরিব। সমাজে জুয়াখোরের মেয়ে বলে বদনাম আছে। নিজের ছোট ভাই হলেও হারুনের বাবা বজর উদ্দিকে পছন্দ করত না। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় হারুনকে যখন না বলে পাত্রী দেখাতে নিয়ে যায়। পাত্রীদের অবস্থা ভালো বলে হারুনের বাবার পছন্দ হয়। তাকে বিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হারুন রাজি হয় না। অবশেষে কারণ জানা গেল, বিলু। এ কথা শুনে হারুনের বাবা খেপে যায়। বিলুর মাকে গিয়ে শাসিয়ে আসে, 'হারুনকে নিয়ে যেন কোনো লোভ না করে।' আকাশ থেকে পড়ে রাবেয়া। তড়িঘড়ি করে দূরের এক গ্রামে বিলুকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
বিলুর বিয়ের খবরে মুষড়ে পড়ে হারুন। গ্রাম থেকে চলে যায় অজানার উদ্দেশে। অবশেষে সে এক বেদে দলে যোগ দেয়। এদিকে হারুনের বাড়ি ছাড়ায় শোকে কাতর বাবা মারা যায়। একা একা কঠিন সময় যখন রাবেয়া পার করছিল, তখন একদিন শুনতে পায় তার আদরের সন্তানটি মারা গেছে, যাকে বিক্রি করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয় তার স্বামী বজর উদ্দি। এত শোক সইবে কেমনে রাবেয়া। সে পাড়ি দেয় না ফেরার দেশে।
অবশেষে বেদেনীকে বিয়ে করে বাড়ি ফেরে হারুন। তখন মায়ের খালি বাড়িতে বেড়াতে আসে বিলু। সঙ্গে শিশু সন্তান। এ এক কঠিন দুঃসহ মুহূর্ত। হাবিবুর রহমান জুয়েলই সে চিত্র অঙ্কন করেছেন। পাঠককে এক কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছেন। অশ্রু ফেলা ছাড়া কেইবা থাকতে পারবে। সেদিন যে হারুনের সঙ্গে বিলুর দেখা হয়। কথা হয়। হারুন জানতে পারে বিলুর স্বামীর এক কঠিন রোগের কথা। মৃত্যুই যার পরিণতি। তার পরও তাকে জামাইর বাড়িতেই যেতে হবে। অথচ হারুন তার কিনা হতে পারত। এত মায়ার জীবনে এত কষ্ট এঁকেছেন লেখক। সত্যি এ এক মন খারাপ করে দেওয়া উপন্যাস। তার অসাধারণ শব্দ চয়ন, কাহিনী বুননের কথা বলার অবকাশ এখানে নেই। তবে এ এক অসাধারণ উপন্যাস।
ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।