Mahfuzur Rahman Manik
গরুই বর্ষসেরা!
ডিসেম্বর 24, 2015
cow-indiaগরু যত নিরীহ প্রাণীই হোক আলোচনা-সমালোচনা যে একে ছাড়ছে না। গোটা বছরে নানা কারণে গরু আমাদের দেশে যত না আলোচনায় ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ভারতে। বছরের শেষে এসে তাই ইয়াহু বলছে, ভারতে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার গরু। ভারতের এত রথী-মহারথীর ভিড়ে আলোচনায় যখন গরু শীর্ষে, তখন স্পষ্টতই বোঝা যায় এখানে 'কিন্তু' একটা আছে।
এ বছরজুড়েই আমরা তা দেখেছি। মার্চ মাসে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে গরু নিষিদ্ধ হয়। সেখানে গরু জবাই, গরুর গোশত বিক্রি ও খাওয়ার ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আইন অমান্যকারীর জন্য উচ্চমাত্রায় জরিমানা দেওয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান করা হয়।এ ঘটনায় অনলাইন-অফলাইন উভয় জায়গায় ব্যাপক তোলপাড় হয়। এরপরই এপ্রিলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশ-ভারতের কয়েকটি সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে গরু সরবরাহ বন্ধে সীমান্ত বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দেন। বাংলাদেশে গরু আসা কমে যায়। বলা বাহুল্য, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের শেষ দিকে রাজনাথ সিংয়ের বিএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি বলেছিলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার বন্ধে সবরকম চেষ্টা করতে হবে। বিজেপির নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্য তথাগত রায় তো স্পষ্টই বলেছিলেন, ভারত থেকে গরু রফতানি নিষিদ্ধ। গরু পাচারের মাধ্যমে যে অর্থ ভারতে আসে তা কালো টাকা। এই অর্থ সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসবাদেরও জন্ম দেয়। এ ক্ষেত্রে সীমান্ত হাটে গরু বিক্রির বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। এ নিয়েও উভয় দেশে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। কারণ আদতে গরু আমাদের দেশে না আসার ফলে ক্ষতিটা ভারতেরই।
অক্টোবরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার বলেন, মুসলমানরা ভারতে বসবাস করতে পারবে; কিন্তু গরুর মাংস খেতে পারবে না। দেশটির দাদ্রি শহরে গরুর মাংস খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে জনতার হাতে এক মুসলিম নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্যে শাসক দলের যখন নাজেহাল দশা, তখন খাত্তারের বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো শোনায়। এমনকি শাসক দল বিজেপির বিভিন্ন নেতার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'ক্ষুব্ধ' হওয়ার খবরও সংবাদমাধ্যমে আসে। তখনও আলোচনায় ছিল গরু।
india-religious-intolerance-udas-তবে আলোচনা তুঙ্গে উঠে নভেম্বরে। এমনকি তা ভারতীয় সংসদেও গড়ায় গরুকে কেন্দ্র করে অসহিষ্ণুতায় বলিউড সুপারস্টার আমির খানের মন্তব্যে। ক্রমবর্ধমান অসহিষুষ্ণতার ঘটনাগুলো দেখে তিনি বলেন, 'নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিরণ (স্ত্রী) এতটাই উদ্বিগ্ন যে আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, আমাদের কি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত?' গরু আসলে নিজে কোনো উপলক্ষ নয়। উপলক্ষ অসহিষ্ণুতা। যেখানে গরুর মাংস নিয়ে গুজবের জেরে সহিংস হামলায় মানুষ মারা যায়। এমনকি এসব ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতজুড়ে সাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকারসহ অন্তত ৭৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি তাদের পুরস্কারও ফিরিয়ে দেন। গরু যখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতীক এবং একে কেন্দ্র করে যখন বছরজুড়ে এত ঘটনা তখন হয়তো ইয়াহুর আলোচিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে গরুর নাম উঠে আসা অমূলক নয়। এখানে গরুর ব্যক্তিত্ব আছে কি নেই, তা অন্য বিষয়। মাথাব্যথার কারণ অবশ্য ধর্মীয় অসহিষুষ্ণতা। যার কারণে নিরীহ প্রাণী নিয়ে এত ঘটনা। এ ব্যথা থেকে আমরা যত দ্রুত মুক্তি পাব ততই মঙ্গল।

 

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।