Mahfuzur Rahman Manik
বয়সের বাধা জয়!
অক্টোবর 7, 2015

04_105খেলার সঙ্গে বয়সের গভীর সম্পর্ক। খেলাকে সবাই একটা নির্দিষ্ট বয়সের ফ্রেমে বাঁধেন। শুরুর সময় নির্ধারিত না হলেও শেষটা সবাই মানেন। শিশু থেকেই নানা খেলার মাধ্যমে সবাই বড় হয়। একটা বয়স পর্যন্ত অনেকেই খেলেন। এরপর ছেড়ে দেন। একেবারে প্রফেশনালিও যারা খেলেন, যত বড় খেলোয়াড়ই হোন চলি্লশের পর কমই খেলতে দেখা যায়। কারণ খেলার জন্য যেমন কৌশল প্রয়োজন, তেমনি শক্তি-সামর্থ্যেরও প্রয়োজন। চলি্লশের পর সে সামর্থ্য ও মানসিকতা সাধারণত থাকে না। তারপরও কিছু খেলা থাকে যেগুলো অনেক বয়স পর্যন্ত খেলা যায়। শখ করে কিংবা ব্যায়ামের কাজ হিসেবেও যেমন অনেকে ব্যাডমিন্টন খেলেন। কিন্তু ফুটবল সে ধরনের নয়। এটি শক্তির খেলা। অথচ শনিবার ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের সে ফুটবল খেলাই দেখা গেল কিশোরগঞ্জে। 'এ বয়সেও ফুটবল!' শিরোনামে সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতেবদনে জানা যায়, সেখানে একটি সংগঠন এ প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে। ষাটোর্ধ্বদের জন্য আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় আশির কোটা পেরোনো বৃদ্ধও অংশ নেন। এমনকি ৮৬, ৮৩, ৮২ বছরের তিন খেলোয়াড়ও সেখানে ছিলেন।
প্রবীণ দুই দলের মধ্যকার এ খেলায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক দর্শক হয়। সংবাদভাষ্য মতে, এমন বয়স্ক খেলোয়াড়দের খেলা দেখে মানুষ ব্যাপক বিনোদিত হয়। মানুষের বিনোদন হয়তো দুটি কারণে বেশি হয়েছিল। প্রথমত, বয়স্কদের মধ্যকার খেলা। খেলোয়াড়রা হয়তো কারও বাবা কারও আবার দাদাও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ফুটবল আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলা। অথচ খেলাটি গ্রাম থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আদর অগ্রজরা নিশ্চয়ই জানেন। আমরাও লোকমুখে শুনে কিংবা সংবাদমাধ্যমে পড়ে জেনেছি, নব্বইয়ের দশকে ফুটবল কতটা জনপ্রিয় ছিল। সে সময় আবাহনী-মোহামেডানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তুঙ্গে। আবার ফুটবল বিশ্বকাপ এলে বাড়ি বাড়ি পতাকা টানানোসহ তা নিয়ে মানুষের মাতামাতিও ফুটবলের প্রতি মানুষের বিশেষ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সেদিক থেকেও সেদিনের ম্যাচটি ঐতিহাসিক।
যদিও বৃদ্ধদের সে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ একদিনের জন্য। তারপরও এর রেশ যে অনেকদিন থাকবে, বলা বাহুল্য। দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়রাও আনন্দ পেয়েছেন। একজনের বক্তব্য এসেছে প্রতিবেদনে। তিনি বলছেন, 'দীর্ঘ ৩০ বছর পর মাঠে নেমে যে আনন্দ পেয়েছি তা বোঝানোর মতো নয়।' তারা হয়তো একদিনের জন্য মাঠে নেমেছেন। তবে এটা ঠিক যে, সুস্বাস্থ্যের জন্য খেলা প্রয়োজন। আমাদের শিশুদের জন্য এটা বিশেষ প্রয়োজন। বিদ্যালয়ে এজন্য বিশেষ পাঠও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে খেলা থেকে বঞ্চিত। একদিকে অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত মাঠ নেই। আবার কোথাও শিশু অভিভাবকদের চাপে সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। এ অবস্থার উত্তরণ প্রয়োজন। প্রবীণদের এ ফুটবল ম্যাচ হয়তো আমাদের সে উৎসাহ দেবে।
একদিকে ফুটবলের দিন ফিরিয়ে আনা, অন্যদিকে শিশুদের খেলার বন্দোবস্ত করা। সর্বোপরি সব বয়সের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিশেষ প্রয়োজন। এ রকম প্রেরণাদায়ক প্রীতি ম্যাচ আমরা আরও চাই।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।