Mahfuzur Rahman Manik
গণপরিবহন ও জনজীবন
অক্টোবর 27, 2015

Dhakaবাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন। অগণিত যাত্রী। চাতক পাখির মতো একটা বাসের অপেক্ষা। বাস আসবে। সবাই উঠবে। কিন্তু কোথায় কি! বাস আসছে। দিব্যি দরজা বন্ধ করে আছে। বাইরের অপেক্ষমাণ মানুষের আকুতি শোনার সময় নেই। আসলে পর্যাপ্ত যাত্রী আগেই তোলা হয়ে গেছে। আবার অপেক্ষার পালা। বাস আসে। দাঁড়ায় না কেউই। এবার বুঝি প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হবে। কিন্তু বাসের দরজার বাইরেও ঝুলছে যাত্রী। যাত্রী নামবে দু'জন। উঠার জন্য অন্তত ২০ জনের হুমড়ি খেয়ে পড়া। অতঃপর ধাক্কিয়ে পাঁচজনের ওঠা। আপনিও তাদের একজন। কোনোমতে ঝুলে যাচ্ছেন। সময়মতো অফিস ধরতে হবে। কিংবা অফিস শেষে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরবেন। ঝুলতে ঝুলতে একসময় জায়গা পেলেন বাসের মেঝেতে। দাঁড়িয়ে আছেন। ধীরে ধীরে মানুষ নামছে। অনেক পরে একটা সিটের দেখা পেলেন। বসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। জীবন বুঝি এমনই। পৃথিবীতে কোথাও নিজের জায়গা করার উদাহরণটা যেন ঢাকার বাসে জায়গা পাওয়ার সঙ্গে মিলে যায়। যেখানে আপনার প্রবেশ কষ্টসাধ্য সেখানে অনেক কষ্টে আপনাকে কোনোমতে দাঁড়াতে হবে, তারপর ধীরে ধীরে সেখানে আপনার জায়গা হবে।
রাজধানীর পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়ার কথা বলে কী লাভ। যেখানে কেউ আধঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে। বাস পাচ্ছে না। বারবার চেষ্টা করেও বাসে উঠতে পারছে না। সুযোগ পেলে পিকআপের পেছনে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে, তার কাছে ১৫ টাকার ভাড়ার ৩০ টাকা দাবি করলেই-বা কি। তার মন স্বাচ্ছন্দ্যে তার চেয়েও বেশি ভাড়া দেওয়ার জন্য হয়তো উন্মুখ হয়ে আছে। কারণ তার যাওয়া জরুরি। এখানে অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে অভিযান অসহায়। তার নাম ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষ যে এখন গণপরিবহনের কাছে জিম্মি। কারণ মানুষ বেশি অথচ প্রয়োজনের তুলনায় পরিবহন নগণ্য।
পরিবহন সংখ্যা যদিও বাড়ছে। ট্রাফিক জ্যামও বাড়ছে। ভোগান্তি কিন্তু কমছেই না। দুর্ভোগের শহরে অনিশ্চিত যাত্রা সবার। কোনো কারণে একটা গাড়ি নষ্ট হলে বা দাঁড়িয়ে পড়লে পেছনে একশ' গাড়ির লাইন পড়তে কয়েক মিনিটও লাগে না। অথচ ঘণ্টায়ও তা ছাড়ে না। রিকশা-অটোরিকশায় চড়ার সামর্থ্য হয়তো অনেকেরই হয় না। যারাও-বা চড়ে প্রয়োজনে অনেক সময় পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও ভাড়ার কাছে এখানেও সবাই অসহায়।
মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তে অসহায়তাই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি। দরিদ্র মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। এখানে নাকি পকেটে প্রাণ নিয়ে বাসা থেকে বেরোতে হয়। বাসায় ফিরবে কয়টায়, কখন_ তার নিশ্চয়তা নেই। এই ঢাকা শহরে উন্মুক্ত জীবন সবার। যার জীবনের চিন্তা তারই। হয়তো কোনো বাস আপনাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাবে, আপনার দিকে ফিরে তাকানোর সময় কারও নেই।
এভাবেই চলছি আমরা। জীবনের সংগ্রামের হয়তো এটাও একটা অংশ। মানুষও সেভাবেই মেনে নিয়েছে। তারপরও অনেক সময়ের অসহায়ত্ব পীড়াদায়ক হয়। যে বাসে আপনি প্রতিদিন আসতেন, ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে সেটি হঠাৎই সিটিং নাম দিয়ে বসে আছে (যদিও আদৌ ঢাকায় সে অর্থে সিটিং বাসের অস্তিত্ব আছে কিনা সন্দেহ)। একেবারে দরজা আটকিয়ে মানুষ পুরিয়ে নতুন চেহারা নিয়ে চলছে। যেন ঢাকার 'ঢাকা' পরিবহন। আর বাইরে মানুষের আর্তি। অর্থের কাছে জীবন অসহায়_ এটাই কি তার উদাহরণ? কে জানে।

 

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।