Mahfuzur Rahman Manik
ডিগ্রি কি জব টিকিট?
আগস্ট 22, 2015

graduation_0বুধবার ইংল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক গবেষণার খবর দিয়েছে বিবিসি। সিআইপিডি নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েটই 'ননগ্র্যাজুয়েট' চাকরি করছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে একজন শিক্ষার্থীর যে ধরনের কাজ করার কথা, তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কাজ করছে ৫৮ দশমিক ৮ ভাগ গ্র্যাজুয়েট। এর প্রতিক্রিয়ায় সেখানকার গার্ডিয়ান পত্রিকায় কাহিন্দে এন্ড্রুজ লিখেছেন, 'ইট ইজ অ্যা ডিগ্রি, নট অ্যা টিকিট টু অ্যা জব'_ এটা একটা ডিগ্রি মাত্র, চাকরিতে প্রবেশের টিকিট নয়। এ গবেষণা নিয়ে সেখানে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। বিষয়টা যে আমাদের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রাসঙ্গিক, তা দেখার মতো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের কতভাগ ননগ্র্যাজুয়েট চাকরি করছেন, তা নিয়ে দেশেও ভালো গবেষণা হতে পারে।
এটা সবাই জানেন, দেশে অনেক চাকরিতে, বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে যেখানে যোগ্যতা হিসেবে এইচএসসি চাওয়া হয়, সেখানে ডিগ্রি-অনার্স পাসকৃতরাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আর এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পাস করা বিপুল অধিকাংশই অনার্স সমমানের যোগ্যতার চাকরি করছেন। এমনকি অনেকে তা চেয়েও পাচ্ছেন না। ফলে বলার অপেক্ষা রাখে না, এখানকার গ্র্যাজুয়েট কত ভাগ ননগ্র্যাজুয়েটের চাকরি করছেন।
এ বিষয়ে গবেষণার কারণ হয়তো একটাই, আমরা সবাই চাই যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষাধারী, প্রত্যেকেরই তার ডিগ্রি অনুযায়ী চাকরি পেতে হবে। এই প্রত্যাশা হয়তো দুনিয়ার সব জায়গায়ই একই রকম। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব? কিংবা সম্ভব হলেও সেটা জোর করে চাইতে গিয়ে আমরা শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যকে কেবল চাকরির ফ্রেমেই আবদ্ধ করে ফেলছি। সেখানেই প্রশ্নটি আসছে, যেটা এন্ডু্রজ গার্ডিয়ানের লেখায় বলেছেন, এটা কেবল একটা ডিগ্রি; চাকরি পাওয়ার টিকিট নয়। একই সঙ্গে ডিগ্রিটাকে যখন আমরা কেবল চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ করছি তখন শিক্ষার মহৎ লক্ষ্য যে জ্ঞানার্জন_ তাকে খাটো করে ফেলছি। কারণ আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয় মানে বিশ্বের বিদ্যা বা জ্ঞানের ঘর। এখানে জ্ঞানচর্চাই প্রধান। কিন্তু চাকরির বিষয়টা যে পর্যায়ে গেছে, তাতে এখানে জ্ঞানের কথা বলা কেবল তত্ত্বকথা নয়; বাস্তবতাবর্জিতও মনে হবে।
এটা ঠিক, শিক্ষার সঙ্গে চাকরির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঁচার জন্য চাকরির বিকল্প নেই। তাই বলে প্রত্যেককে তার ডিগ্রি অনুযায়ী চাকরি করতেই হবে; তা কিন্তু নয়। এমনকি আমাদের দেশের বাস্তবতায় এট অসম্ভবই বলা চলে। প্রতি বছর সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যত শিক্ষার্থী বের হন, সে অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র নেই। ফলে বেকারত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি কম যোগ্যতার চাকরিতেও লাইন পড়ছে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের। আবার গ্র্যাজুয়েটদের তুলনায় চাকরির বাজার ছোট হওয়ায় প্রচণ্ড প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সেখানে অল্পসংখ্যকই স্থান করে নিতে পারেন। তার হিসাব করলে শতাংশে কতভাগ আসবে তা সহজেই অনুমেয়। অবশ্য আমাদের আরও সমস্যা হলো, যিনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করেন তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত চাকরি নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ব্যাংকে চাকরি করছেন কিংবা অর্থনীতিতে পড়ে যখন বিসিএসের ভিন্ন ক্যাডারে চাকরি করেন তাকে আমরা কী বলব?
তারপরও বিষয়টি যখন সামনে এসেছে ভাবতে মন্দ কী।

 

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।