Mahfuzur Rahman Manik
বইয়ের আশ্রয়ের খোঁজে!
আগস্ট 25, 2015

Bookকখনও কখনও পত্রিকার সংবাদের চেয়ে সংবাদসংশ্লিষ্ট ছবি হৃদয়গ্রাহী হয়। পড়ার চেয়ে চোখে দেখে ঘটনার বাস্তবতা বোঝা সহজ হয়। সোমবার সমকালের লোকালয়ে প্রকাশিত সংবাদসংশ্লিষ্ট এই ছবি তার প্রমাণ। ছবিটি দেখাচ্ছে, একটি শিশু বুকসমেত পানি ডিঙিয়ে যাচ্ছে, তার হাতে বই। পানি বুকের ওপর উঠলেও বই ভিজতে দেয়নি। দুই হাতে বই উঁচিয়ে ধরে আছে শিশুটি।
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বাড়ায় সেখানকার সারিয়াকান্দির নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সেখানকার মানুষ। পানি যেমন মানুষের বসতবাড়িতে উঠেছে, স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার বিদ্যালয়ও রক্ষা পায়নি। ফলে প্রশাসন সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে এক সপ্তাহের জন্য। কিছু বিদ্যালয়ের ক্লাস কাছাকাছি বাঁধের ধারে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। চারদিকে পথঘাট ডুবে যাওয়ায় তাদের পক্ষে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অবশ্য পানি ওঠেনি, সেখানে আশ্রয় নিয়েছে পানিবন্দি অনেক পরিবার। ছবিটি সে এলাকার। ক্যাপশন বলছে, ঘরে পানি ওঠায় শিশুটির বই ভিজে গেছে। বইয়ের আর ক্ষতি যাতে না হয় তাই সেগুলো দুই হাত উঁচিয়ে ধরে কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে।
বন্যায় ঘরবাড়িতে পানি উঠলে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়লে মানুষ আশ্রয় খোঁজে। তখন মানুষ তার অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতে নেয়। অনেক সময় প্রয়োজনীয় অনেক কিছুও ফেলে আসতে হয়। শিশুটিও হয়তো কিছু ফেলে এসেছে। কিন্তু তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নিজের বই। চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বেশ চিন্তিত। যেখানে তার শরীরের বেশ অর্ধেকই পানির নিচে অথচ দুই হাতসহ বই পানির ওপরে। হয়তো তার চিন্তার অন্যতম কারণ বই বাঁচানো।
আসলে শিক্ষার্থীর কাছে তার বই অমূল্য। অনেকে অত্যন্ত যত্ন করে রাখে। এমনকি বইয়ের ওপর আলাদা কাভার দিয়ে তাকে সংরক্ষণ করে। এই শিশুটিও তার কাছে বইয়ের গুরুত্ব কতটা তা বোঝাচ্ছে। যেখানে সে নিজে বিপদের মধ্যে। হয়তো তার পরিবারও বিপদে। তাদের থাকারও ঠিক নেই। সে সময়ও বই সে ছাড়েনি। বই সঙ্গে করেই যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। যেটা তার জন্য যেমন নিরাপদ, তেমনি বইয়ের জন্যও।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শিক্ষাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকার বিদ্যালয়ে পানি উঠলে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীরাও পানির মধ্যে ক্লাস করতে আসতে পারে না। বন্যা ছাড়াও হাওর এলাকায় এ রকম চিত্র দেখা যায়। যেখানে শিক্ষার্থীরা নৌকায় চড়ে বিদ্যালয়ে যায়। নানা অসুবিধার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। আবার দুর্গম এলাকায় যেখানে অনেক দূর বিদ্যালয় সেখানেও সব বাধা অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও সচেতনতা যে বেড়েছে তা বলাই যায়। আর এসবের ফলেই প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের অন্তর্ভুক্তির হার শতভাগ।
ছবির শিশুটি নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণার। বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা, অনুরাগ আমাদের আনন্দিত না করে পারে না। একই সঙ্গে উদ্বেগের বিষয় হলো, সামনে শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষা। বিশেষ করে পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণীতে রয়েছে সমাপনী পরীক্ষা। সেখানে শিক্ষা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রশাসনের তরফ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

ট্যাগঃ , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।