Mahfuzur Rahman Manik
ট্রেনযাত্রায় প্রকৃতির কাছে
এপ্রিল 21, 2015

Riverএবারের ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখে কর্মব্যস্ত নগরজীবনের বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটানোর অসাধারণ অভিজ্ঞতা স্মৃতিতে রাখতেই এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। যদিও একদিনের তারপরও এটি সার্বজনীন ছুটি। মানে ১৬ ডিসেম্বর কিংবা ২৬ মার্চের মত দিনে সংবাদপত্র খোলা থাকলেও এদিন বন্ধ। পহেলা বৈশাখের ৪/৫ দিন আগ থেকেই চিন্তা করছিলাম, একদিনের জন্য বাইরে কোথায় যাওয়া যায়। ঢাকার আশেপাশে কয়েকটা জায়গার কথা মাথায় আসলো- নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও মাওয়া ঘাট তার অন্যতম। এই চিন্তার সঙ্গে মনে মনে বুয়েটের বন্ধু জাহের ওয়াসিম ভাইকে যোগ করে নিলাম। ওয়াসিম ভাই আমার একটু-আধটু ঘুরাঘুরির অধিকাংশ সময়ের সঙ্গী হিসেবে। কিন্তু চারদিন আগে যখন তিনি গ্রামের বাড়ি গেলেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বাদ দিতে হল। তবে ঘুরাঘুরি আসলে একাকী হয় না সেভাবে। পরে লেখক বড়ভাই বন্ধু সোহেল নওরোজকে বললাম ঢাকার বাইরে যাইতে মন চায়। উনি খুলনা থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই বললেন, খুলনা চলে আসো। বললাম, ইচ্ছা থাকলেও একদিনের ছুটি বলে খুলনা যাওয়া যাচ্ছে না।
দুই দিন আগে ফোন দিলাম ফুফাত ভাই রাসেলকে। ও রায়েরবাগ থাকে। সোনারগা থেকে কাছে। তাকে সোনারগাঁ যাওয়ার কথা বললাম। পহেলা বৈশাখে ওখানে অনেক ভীড় থাকে জানিয়ে অন্য জায়গায় যাওয়া যায় কিনা। তাইলে জাহাঙ্গীরনগর। ও এক পায়ে খাড়া। জানাবো বলে ফোন রাখলাম। এদিকে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারি বলে ওখানকার সাংবাদিক ইমদাদ হক ও আরেকজনকে জানালাম, তারাও চেয়েছিলো যেন যাই। কিন্তু হঠাৎ করেই আগেরদিন ঠিক দুপুরে মনে আসলে ময়মনসিংহের কথা। এর আগেও একবার ট্রেনে গেছিলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। তারপরও ওইটাই ভাবছিলাম। তখনি এক কাজে ফোন করলেন আবদুর রহিম রুবেল। আমাদের মামা। ঢাকায় বিপিকেএস এ কাজ করেন। জিগেস করলাম, কাল কোথাও যাবেন নাকি। অবশ্যই, আপনি যেখানে বলেন। এমনকি ময়মনসিংহে গেলে টিকিটও কাটতে পারবে বলে জানালেন।
এবার আমার সিদ্ধান্তের পালা। সময় হাতে অল্প। একটু দূরে যেতে চাইছি বলে ময়মনসিংহের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফোন করলাম ওখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবাল স্যারকে। স্যার লেখালেখি করেন। সাংবাদিকতা সূত্রেই পরিচয়। স্যার তখন ব্যস্ত থাকলেও পহেলা বৈশাখে অবসর থাকার কথা জানালেন। আসলে ভাল্লাগবে- বললেন স্যার। স্যারকে নিশ্চিত করবো বলে কথা শেষ করলাম। সিদ্ধান্ত নিতে নিতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এদিকে আমার অফিসও চলছে। ময়মনসিংহই চূড়ান্ত করলাম। স্যারকে জানালাম মেসেজ দিয়ে। পরে তিনিই ফোন করলেন। অসুবিধা নেই বলে আশ্বস্ত করলেন। সোহেল নওরোজ সেখানকারই ছাত্র, তিনিও বললেন কারো সহযোগিতা লাগলে বলতে।
যাহোক, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে গেলাম। দেখলাম সকাল ৭ টা ২০ এর টিকিট নেই। ৯টা ৪০ এর টিকিট পেলেও অনলাইনে কাটা যাচ্ছে না। ৩ টা টিকিট লাগবে। আমি, ছোট ভাই মাসুম ও রুবেল মামা। রুবেল মামারে জানালাম টিকিট কাটতে পারছি না। বললেন, আমার উত্তরার বাসা থেকে সহজেই এয়ারপোর্ট স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটা যাবে। তখনি গেলেন। কিন্তু ৭ টার টিকিট পেলেন না। অগত্যা ৯টার ৩টা টিকিট নিলেন। যেটা এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়তে সোয়া দশটা বেজে যায়। মামা টিকিট নিশ্চিত করার পরই রাসেল ফোন দিলো। কোথায় যাবেন সিদ্ধান্ত নিলেন? বললাম, আমরা তো ময়মনসিংহ বাকৃবিতে যাবো। টিকিট নিয়ে নিছি। সেও যেতে চায়। বললাম অসুবিধা নাই, সকাল সকাল এয়ারপোর্ট ট্রেন স্টেশনে চলে আসিস, টিকিট পাওয়া যাবে হয়তো।
পহেলা বৈশাখে ট্রেন স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম সকাল সোয়া আটটায়। মিরপুর আমাদের বাসা থেকে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম স্টেশনে। যদিও বলাচলে বাসে মিরপুর সাড়ে ১১ হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে সময় লাগছে ৩০ মিনিট। মাথায় ঘুরছে, একটা টিকিট লাগবে। আমি আর মাসুম স্টেশনে পৌঁছেই টিকিটের জন্য দাঁড়ালাম। লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে যখন টিকিট নিবো তার আগেই শুনি, টিকিট শেষ। ওরা জানাল দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট দেওয়া যেতে পারে। টিকিট নিলাম। কারণ সিটের চেয়েও বৈধভাবে যাওয়াটা জরুরি। কিন্তু ওই টিকিটও শোভন চেয়ারের দামেই রাখলো। ইতিমধ্যে রাসেল চলে এসেছে। মামাও যথাসময়ে আসলেন। ট্রেন ঠিক সময়ে আসলো।
ট্রেনে উঠলাম। দেখি আমাদের সিটে অন্য যাত্রী বসা। যদিও ৪ টিকিটে সিট আমাদের ৩টা। ওদের উঠিয়ে দিয়ে এক পাশে দুই সিটে ৩ জন বসলো। আমি অন্য পাশে একটায় বসবো। সেখানেও ৩ জন বসা। সম্ভবত সবাই আত্নীয়। একজন উঠলো। ওখানেই চেপেচুপে বসলাম। এর মধ্যে দুইজনই আমার মা ও বোনের বয়সী নারী। বুঝলাম এখানে বসে গেলে যাওয়ার আনন্দটাই মাটি হবে। আমি উঠে গেলাম। পরে উনারা তিনজনই বসলেন। সহযাত্রীদের কাছেই ফিরলাম। একেকসময় একেকজন বসে-দাঁড়িয়ে একসঙ্গেই কথা বলে অার প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে গেলাম। পৌঁছতে দুপুর হয়ে গেলো।
ময়মনসিংহ ট্রেন স্টেশনে পৌছেই মামার কৃতিত্বে চারটা টিকিট নিশ্চিত হলো। শহর থেকে ক্যম্পাসে ইকবাল স্যারের বাসায় গেলাম সিএনজি টাইপের যানবহনে। একদিনের জন্য ঘুরতে এসে কারও আতিথেয়তা নেওয়ার আগ্রহ না থাকলেও স্যারের আন্তরিকতার কাছে নতি স্বীকার করলাম। একইসঙ্গে অবাক হলাম তার বাসার বিচিত্র আয়োজন দেখে। স্যার-ম্যাডাম উভয়ই চাকুরিজীবী। তাদের নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমাদের জন্য আয়োজনে কোনোটা-ই বাদ দেননি। স্যারের বাসা থেকে বেরুতে বেরুতে অনেক সময় হয়ে গেলে। তারপর ঘুরলাম আমরা ক্যাম্পাসে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাস। ঘুরতেও কয়েকদিন লেগে যাবে। এর মধ্যে বাছাইকৃত কিছু জায়গায় গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দিন বলে হয়তো অনেক কিছু বাদও পড়েছে। Brahmaputraতবে সেটা পুষিয়ে দিয়েছে পাশের ব্রহ্মপুত্র নদী। ব্রহ্মপুত্র নদী দেখাই ছিলো শেষ আয়োজন। নদীর কাছে অনেক সময় কাটালাম। ছবিও তুললাম প্রকৃতির। যদিও প্রায় চার বছর আগে এসে যে নদী দেখছিলাম সেটা ছিলো না। তারপও পানি আছে। নৌকা দিয়ে মানুষ এপার থেকে ওপার যাচ্ছে। পহেলা বৈশাখ বলে অনেক অনেকে নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছে।
সময় আমাদের আর থাকতে দিলো না। চলে এলাম স্টেশনে। সাতটার চার মিনিট আগেই ট্রেন হাজির। এবার চারজনের পাশাপাশি চারটা টিকিটই পাওয়া গেলো। ছোট ভাই মাসুমের প্রথম ট্রেনযাত্রা। তার সঙ্গে আমরাও কম উপভোগ করিনি। ট্রেন চলছে সমানতালে চলছি আমরাও। নিস্তব্ধ প্রকৃতি দেখা আর রাতে ট্রেন চলার লক্করঝক্কর শব্দের অনুভূতি লিখে প্রকাশ করার মত নয়। শব্দটা যেন এখনও কানে বাজছে।

  • ছবি: মোবাইলে তোলা
ট্যাগঃ , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।