Mahfuzur Rahman Manik
পাঠ্যসূচিতে সাঁতার
নভেম্বর 8, 2014

Children_swimming_in_Bangladeshসাঁতার কাটা কেবল ভালো ব্যায়ামই নয় নিরাপত্তার জন্যও এটি আবশ্যক। সাঁতারের জন্য প্রয়োজন পানির আঁধার, বিশেষ করে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-দীঘি কিংবা সুইমিংপুলের। গ্রামের মানুষের জন্য এদের অধিকাংশই পাওয়া সহজ। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই পুকুর থাকে। কোথাও কোথাও থাকে দীঘি। অনেক গ্রামের পাশে আবার নদীও রয়েছে। যেখানে সবাই গোসলসহ গৃহস্থালির সব কাজকর্ম সম্পাদন করেন। ফলে গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটি শিশুর ছোটবেলা থেকেই পানির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে এবং অনেকে দ্রুত সাঁতারও শেখে। শহরের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। সেখানে সাঁতার কাটার মতো অবস্থা নেই। শহরের মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী সুইমিংপুলও পর্যাপ্ত নয়। স্কুলগুলোতে তো সুইমিংপুলের কথা চিন্তাও করা যায় না। সেখানে শিশুরা সাঁতার শিখবে কীভাবে! এ বিষয়ে আমাদের কারিকুলামে যে জোর দেওয়া প্রয়োজন তা-ও নেই। বিশেষ গবেষণা তো দূরের কথা। ইংল্যান্ডে এ রকম এক গবেষণার কথাই বলছে সে দেশের সংবাদপত্র গার্ডিয়ান। ৫ নভেম্বর গার্ডিয়ানের শিক্ষা বিভাগে প্রকাশিত এ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি একটি জরিপসূত্রে বলছে, জাতীয় কারিকুলামে থাকলেও সেখানকার প্রায় তেরশ' প্রাথমিক বিদ্যালয়ই সাঁতারের শিক্ষা দেয় না। জরিপটি এও বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক শিশুই সুইমিংপুলে কোনো সাহায্য ছাড়া ২৫ মিটারও সাঁতার কাটতে পারে না। তারা বলছে, অনেক স্কুল শিশুদের যাতে সম্পূর্ণ সাঁতার শিখতে পারে সে জন্য সুইমিংপুলে পর্যাপ্ত সময়ও ব্যয় করছে না। আর অভিভাবকদের কথাও এসেছে প্রতিবেদনে, যেখানে ৪০ শতাংশ অভিভাবকই শিশুর নিরাপত্তায় সাঁতারের বিষয়টিতে সচেতন নয়।
আমাদের চিত্র অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্ষাকালে বন্যা যেমন আমাদের নিয়মিত চিত্র, তেমনি সাঁতার না জানার ফলে ডুবে মারা যাওয়ার চিত্রও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে পুকুর, নদী, খাল-বিলসহ পানির আঁধারগুলো খোলামেলা। এখানে প্রতিবছর ১-১৭ বছর বয়সী প্রায় ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। আমাদের বছরজুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্ষা এর অন্যতম কারণ।
তাছাড়া অনেক নদী শুকিয়ে গেলেও এখনও আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদীপথে যাত্রা আনন্দদায়ক এবং সাশ্রয়ী। নদীপথে দুর্ঘটনা ঘটলে সাঁতার জানা না থাকলে তার পরিণতির বিষয়টি কারও অজানা নয়। লঞ্চ দুর্ঘটনায় আমরা একই সঙ্গে অনেক মানুষ মরতে দেখি, সেখানে সাঁতার না জানাও হয়তো একটা কারণ। ফলে সাঁতারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সবার জন্যই সাঁতার শেখা জরুরি। নদীমাতৃক দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের যেসব লাইফ স্কিল প্রয়োজন সাঁতারও তার বাইরে নয়। এ জন্য আমাদের কারিকুলামে সাঁতারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
swimming-training-dhaka-guideগ্রামে পুকুর-খালের অভাব নেই বলে শিশুদের জন্য সাঁতার শিখতে সমস্যা না হলেও সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের অগোচরে কোনো শিশু যাতে পানিতে পড়ে না যায়। একা একা যেন শিশু পানিতে না নামে। শহরের শিশুদের জন্য যাদের সম্ভব সুইমিংপুলে সাঁতার শেখানো কিংবা গ্রামের বাড়িতে গিয়েও শেখা যেতে পারে। ইংল্যান্ডের মতো আমাদের স্কুলে স্কুলে হয়তো সুইমিংপুল স্থাপন সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সচেতন হলে, কারিকুলামে বিষয়টি গুরুত্ব দিলে নিরাপত্তার স্বার্থেই সবাই সাঁতার শেখায় আগ্রহী হবে।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।