Mahfuzur Rahman Manik
ছুটি বনাম প্রশান্তি
অক্টোবর 25, 2014
public-holidaysজীবনধারণের জন্য মানুষকে কোনো না কোনো কাজ করতে হয়। কেউ চাকরি করেন, কেউ ব্যবসা করেন, এর বাইরেও বিচিত্র পেশা সমাজে বিদ্যমান। তবে সবকিছুর মূল বিষয় কাজ। এই কাজে মানুষ প্রশান্তি চায়, যাকে বলা হয় জব স্যাটিফেকশন। প্রত্যেক মানুষই এই প্রশান্তির জন্য তার পছন্দের কাজ বেছে নেন। এ পছন্দের মধ্যেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। সবাই যেমন ব্যাংকার হতে চায় না, তেমনি শিক্ষকতাও কারও ভালো নাও লাগতে পারে। ভালো লাগার কারণে কেউ সাংবাদিকতাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ পেশাও বেছে নেন। একই সঙ্গে মানুষের পেশার পরিবর্তনও দেখা যায় অহরহ। এখানে প্রশান্তিও গুরুত্বপূর্ণ। চাকরিতে স্যাটিসফেশন না এলেই বারবার পেশা কিংবা কর্মস্থল পরিবর্তনের বিষয়টি আসে। এই প্রশান্তির সঙ্গে কিছু বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
শুক্রবার প্রকাশিত বিবিসির 'ওয়ান্ট মোর টাইম অফ? লিভ হেয়ার' প্রতিবেদনটি সে প্রশ্ন দিয়েই শুরু হয়েছে_ চাকরিতে প্রশান্তি লাভের মূল মন্ত্র কী? উত্তরে কেউ বলবেন স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা কিংবা বেশি বেতন। বিবিসি বলছে না, এর বাইরেও আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। ছুটি। পরিশ্রমের পর সবাই যেমন বিশ্রাম চায়, তেমনি অফিসের ক্লান্তি দূর করার জন্য প্রয়োজন হয় ছুটির। পর্যাপ্ত ছুটি পাওয়া না গেলে কখনও কখনও কাজে মন নাও বসতে পারে। কিন্তু বেশি ছুটি আছে কোথায়? সে তথ্যই দিচ্ছে বিবিসি।
পাবলিক হলিডে বা সাধারণ ছুটির কথা আমরা জানি। বিবিসির প্রতিবেদনটিতে মানবসম্পদ বিষয়ক কনসাল্টিং ফার্ম মার্কারের তরফে একটি জরিপে দেখানো হয়েছে_ কলম্বিয়া ও ভারতে সবচেয়ে বেশি সাধারণ ছুটি রয়েছে ১৮ দিন। আর সর্বনিম্ন ৭ দিন সাধারণ ছুটি রয়েছে মেক্সিকোয়। জরিপে দেখা যাচ্ছে, এশিয়া ও প্রশান্ত সাগরীয় দেশগুলোতে ছুটির দিন সবচেয়ে বেশি। যেমন থাইল্যান্ডে ১৬ দিন, জাপানে ১৫ দিন। অন্যদিকে নর্থ আমেরিকার দেশগুলোতে সাধারণ ছুটির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই জরিপে একই সঙ্গে জব স্যাটিসফেকশনের একটা চিত্রও দেখানো হয়েছে। থাইল্যান্ডে সাধারণ ছুটি ১৬ দিন, সেখানে স্যাটিসফেকশনের হার সর্বোচ্চ ০.৬১ শতাংশ। অন্যদিকে ১৮ দিন হয়েও ভারতে এ হার ০.৫ শতাংশ, সর্বনিম্ন হার ৮ দিন সাধারণ ছুটি সমৃদ্ধ যুক্তরাজ্যের ০.৩৫। আর বিশ্বব্যাপী গড় হার ০.৪১ শতাংশ।
এসব হিসাবের মধ্যে বাংলাদেশের আলোচনা আসেনি। আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ছুটির তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে পাবলিক হলিডে সংখ্যা ১৪ দিন। এখানকার মানুষের কাজে প্রশান্তি কতটা রয়েছে তার হিসাব সেভাবে নেই। আমাদের বাস্তবতায় ছুটির সঙ্গে প্রশান্তির বিষয়টি মেলানো কঠিন। আর আলোচ্য পাবলিক হলিডে বলা চলে গোটা বছরের ছুটির একটা অংশ। যেখানে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দু'দিন সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এর বাইরেও নির্বাহী আদেশে ছুটি রয়েছে ৮ দিন। আর নিজ নিজ ধর্মের ঐচ্ছিক ছুটি তো আছেই। তাই কেবল পাবলিক হলিডের ফ্রেমে প্রশান্তিকে আবদ্ধ করতে গেলে একটা অস্পষ্ট ফলই আসবে। হ্যাঁ, ছুটির মধ্যে যে প্রশান্তি রয়েছে সে কথা বলাই বাহুল্য। কাজের চাপের মাঝে একটু ফুরসত মানুষকে চাঙ্গা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাহলে প্রশান্তির জন্য কি বেশি বেতন আর চাকরির নিশ্চয়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ? উত্তরটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।