Mahfuzur Rahman Manik
চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার উত্তম
অক্টোবর 15, 2014

Hand washingমানুষের অত্যাবশ্যকীয় প্রায় সব কাজে হাতের ব্যবহার অপরিহার্য। বাঁচার জন্য যে খাবার আমরা গ্রহণ করি তা মুখে তুলে দেয় হাত। এ হাত সর্বাবস্থায় খোলা থাকে, যা দিয়ে সবসময় নানা জিনিস আমরা স্পর্শ করি। হাতে যে কোনো জীবাণু লেগে থাকা স্বাভাবিক। ফলে কোনো খাদ্য গ্রহণের পূর্বে হাত ধোয়া আবশ্যক। অন্যথায় হাতে লেগে থাকা জীবাণু পেটে গিয়ে যে কারও নানা ধরনের রোগ হয়ে যেতে পারে। হাত ধোয়ার গুরুত্বের উপলব্ধি থেকেই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। সুইডেনের স্টকহোমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জোট 'পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ফর হ্যান্ডওয়াশিং' সর্বপ্রথম ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর দিবসটি পালন করে। দিবসটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট গ্গ্নোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডট ওআরজি বলছে, বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস মূলত শিশু ও স্কুলের জন্য করা হয়েছে। তবে যে কেউ হাত ধোয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এটি পালন করতে পারে। ওয়েবসাইটটি আরও বলছে, প্রতি বছর ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের ১৭ লাখ শিশু মারা যায়, যাদের বয়স ৫ বছরেরও কম। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসই এ মৃত্যুর হার দ্রুত কমাতে পারে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০টির বেশি দেশে ২০ কোটিরও বেশি মানুষ প্রতি বছর হাত ধোয়া দিবস পালন করে। বাংলাদেশেও গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয় দিবসটি। এ বছর জাতীয় স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস মিলিয়ে স্লোগান করা হয়েছে_ 'স্যানিটেশনের অভ্যাস করি, সুস্থ-সবল বাংলাদেশ গড়ি'। এর আগেও আমাদের দেশে ঘটা করে দিবসটি পালন করা হয়। উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, ২০১২ সালে দেশের প্রায় ৭৩ হাজার স্কুলে এক কোটি ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী হাত ধুয়ে দিবসটি পালন করে।
আসলে যে কোনো দিবস একটি প্রতীকী বিষয়। ঘটা করে পালনের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং কার্যকর ক্ষেত্রে বাস্তবায়নেই এর সার্থকতা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তা কতটা মেনে চলছি সেটা দেখা জরুরি। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে এক গ্রাম্য লোকের উক্তি ছিল_ 'হাত ধুইয়া কী হইব, হাত ধুইয়া খাইলেও মৃত্যু, না ধুইয়া খাইলেও মৃত্যু।' এটি নাটকের ভাষ্য হলেও হয়তো অনেকেরই এ রকম ধারণা রয়ে গেছে। অথচ হাত ধোয়ার গুরুত্বের বিষয়টি কারও অজানা থাকার কথা নয়। ডাক্তাররা বিষয়টির ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কারণ ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড থেকে শুরু করে সাধারণ ফ্লু, ভাইরাস জ্বর_ এ রকম অনেক রোগই হাতের মাধ্যমে ছড়ায়। ২০০৩ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা গেছে, শুধু হাত না ধোয়ার কারণে সৃষ্ট রোগে দেশে বছরে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সাবান দিয়ে হাত না ধোয়ার ফলে সৃষ্ট আরেকটি সমস্যা হলো পেটে কৃমি হওয়া। দেশের গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু স্কুলে গবেষণা করে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ বাচ্চা কৃমিতে আক্রান্ত। এ জন্য শিশুদের অল্প বয়স থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রথমত পরিবারের সচেতনতা জরুরি। শিশুরা পরিবারেরই খাদ্য গ্রহণ করে বলে তাদের খাবারের আগে মা-বাবা সহজেই হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে পারেন। টয়লেট থেকে আসার পরও হাত ধোয়া জরুরি। শিশুরা কোনো কিছু অনুকরণের মাধ্যমে শেখে। পরিবারের মা-বাবা, ভাইবোন বা অন্যদের খাওয়ার আগে হাত ধুতে দেখলে শিশু নিজে থেকেই তা করতে উদ্বুদ্ধ হবে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের ভূমিকাও কম নয়। শিশুর শেখার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কুলে দিবসটিতে হাত ধোয়ার কর্মসূচি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এ কাজে সহযোগিতায় বেসরকারি কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যারা কাজ করছেন তারাও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। GlobalHandwashingDay
তবে এটা ঠিক, হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। কখন হাত ধোয়া জরুরি তাও জানা দরকার। শুধু পানি দিয়ে হাত ধুলে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হয় সত্যি, কিন্তু জীবাণুমুক্ত হয় না। জীবাণু প্রতিরোধে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হয়। তবে এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক মাটি কিংবা ছাইও ব্যবহার করা যেতে পারে; এগুলোও জীবাণু প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
সুস্থতার জন্য প্রত্যেককেই তার স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হয়। অসুস্থ হয়ে ওষুধ খাওয়া বা ডাক্তার দেখানোর আগে তা প্রতিরোধে সাবধানতাই উত্তম। হাত ধোয়ার বিষয়টি আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষারই মৌলিক কাজ। এটা আনন্দের বিষয়, এ বিষয়ে দিবস পালিত হচ্ছে; আজকে আমাদের শিশুরা এসব জানতে পারছে, সচেতন হচ্ছে। এভাবেই একদিন সবার সচেতনতা আসবে, সবাই মিলে আমরা একটি স্বাস্থ্যবান বাংলাদেশ গড়ব।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।