Mahfuzur Rahman Manik
স্কুলের পথে
সেপ্টেম্বর 6, 2014
Dhaka-traffic-jamস্কুলপড়ূয়া শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তা অন্তহীন। সকালে সন্তানকে ঘুম থেকে উঠিয়ে, প্রস্তুত করে, খাইয়ে স্কুলে পেঁৗছানো পর্যন্ত সব কাজ তাদের করতে হয়। গ্রামে শিশুকে স্কুলে পেঁৗছানোর টেনশন খুব একটা না থাকলেও শহরে এ চিন্তা প্রায় সব পরিবারেই উদ্বেগের। সামর্থ্যানুযায়ী অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পেঁৗছে দিতে নিজস্ব গাড়ি, বাস, রিকশা, স্কুল পরিবহন কিংবা সিএনজি ব্যবহার করেন। পরিবহন যে যাই ব্যবহার করুক এর সঙ্গে সবাইকে যানজটের বিষয়টা অতিরিক্ত মাথায় রাখতে হয়। অন্তত ঢাকা শহরের জন্য এ যে অনিবার্য সত্য। ঢাকার যানজটের কথা কারও অজানা নয়। কোথাও জ্যাম লেগে গেলে কতক্ষণ বসে থাকতে হয় তা বলাই বাহুল্য। এ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে এ সংক্রান্ত ইংল্যান্ডের এক গবেষণার খবর আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। ৩ সেপ্টেম্বর গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম_ চিলড্রেন স্পেন্ড ফিফটি পারসেন্ট মোর টাইম অন স্কুল ড্রাইভ দ্যান ইন দেয়ার পেরেন্টস ডে। স্কুলের পথে শিশুরা তাদের মায়েদের সময়কার তুলনায় অর্ধেকেরও বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে। গবেষণায় আরও বলছে, শিক্ষার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির পরিমাণও বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ। শিরোনামে মায়েদের সময়ের কথা বলা হলেও, এটা ১৯৯৫ হতে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের হিসাব।

বাংলাদেশে এ সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ১৯ বছরে স্কুলের পথে জ্যামে পড়ে কিংবা বিভিন্নভাবে গাড়ি বা পরিবহনে কত বেশি সময় ব্যয় করতে হয়, একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে নিজস্ব গাড়ির সংখ্যা কেমন বেড়েছে তার 'নির্দিষ্ট' হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে অনেকে সার্বিক হিসাব বের করেছেন। একটি সংবাদপত্র জুলাই মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ৭ হাজার ৯৭৭টি গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৬ শতাংশ বেশি। আর তার আগের চিত্র এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০০৪ সালের তুলনায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে গাড়ি বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। সাম্প্রতিক ট্রেন্ড ধরে ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত গাড়ি বাড়ার হার হিসাব করলে হয়তো তা দ্বিগুণ হবে। একই সঙ্গে স্কুলের পথে সময় ব্যয়ের হারও যে কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হবে, তা বের করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কারণ যানজট হিসাব করার জন্য এক প্রাইভেট কারই যথেষ্ট। কিন্তু ঢাকায় কেবল ব্যক্তিগত গাড়িই বাড়েনি, বেড়েছে অন্যান্য যানবাহনও। তার চেয়েও বড় কথা হলো, এখানে প্রতিদিন বাড়ছে লোকসংখ্যা।
এসব মাথায় রেখেই আমাদের অভিভাবকরা সন্তানকে সঠিক সময়ে স্কুলে পেঁৗছানোর ব্যবস্থা নেন। যদিও এই টেনশন যতটা অভিভাবকদের ততটা আমাদের সবার। অন্তত ইংল্যান্ডের গবেষণাও আমাদের সে পথ দেখাচ্ছে। আমরা যে যানজটসহ নাগরিক নানা সমস্যায় আকণ্ঠ ডুবে আছি তা স্পষ্ট। কিন্তু সে তুলনায় প্রকৃতই সমস্যা কতটা সেটা নির্ণয়ে যে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন, সেখানে আমাদের দীনতা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমস্যা নির্ণয়ে যেখানে এই দশা সেখানে সমাধান কতদূর আমাদের জানা নেই। তারপরও আমরা দিব্যি আছি। এই তো আমরা।

ট্যাগঃ , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।