Mahfuzur Rahman Manik
অতঃপর বামনদেরই জয়!
আগস্ট 2, 2014
The researchers' punchiest proposal is 'making humans smaller'
লম্বা হতে কে না চায়! চেষ্টা-তদবির করেও অনেকে লম্বা হয় না। বেঁটে-বামনদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। ক্লাসের লম্বা ছাত্রটি প্রায়ই তার চেয়ে খাটো বন্ধুকে টেনে এনে মেপে কী আহ্লাদই না প্রকাশ করে! অন্যদিকে বন্ধুটির আফসোসের সীমা থাকে না। হয়তো ভাবে, সে-ও একদিন লম্বা হবে। কাজের জন্য কাউকে বাছাই করতে হলে লম্বা-ই সই। বিয়ের বাজারে লম্বার দর অনেক। চাকরিতেও অনেক ক্ষেত্রে লম্বারই জয়। কাউকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে চাই লম্বা মানুষ। এমনকি প্রত্যেক মা-বাবাও হয়তো চায় তার সন্তানটি লম্বা হবে। বামন কেউ ওপরের দিকে তাকালেও দোষ। সবাই যেন তাকে বলছে_ 'বামন হইয়া চাঁদের দিকে চাস?' লম্বার কদরে বামনদের যখন মরি মরি অবস্থা তখন বিজ্ঞানীরা কিছুটা হলেও স্বস্তির বিষয় আবিষ্কার করলেন। মঙ্গলবার গার্ডিয়ান অনলাইনের শিক্ষা বিভাগে প্রকাশিত 'সলভ ক্লাইমেট চেঞ্জ... মেক পিপল স্মলার' শিরোনামের গবেষণা প্রতিবেদনটি সেই বামন হওয়ার পরামর্শই দিচ্ছে!

গবেষণাটি করেছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বায়োএথিকসের অধ্যাপক এস ম্যাথু লিয়াও এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী অ্যান্ডার্স স্যান্ডবার্গ ও রেবেকা রোসি। এটি 'হিউম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ' নামে ২০১২ সালে দ্য জার্নাল এথিকস, পলিসি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টে প্রকাশ হয়। যেখানে বলা হচ্ছে, লম্বা মানুষদের এক রকম বেশিই খাদ্য ও এনার্জির প্রয়োজন। যেমন কোনো গাড়িতে লম্বা মানুষদের বহনের জন্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি জ্বালানি লাগবে। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের একটা প্রভাব রয়েছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের জন্য বামন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। তাদের আইডিয়া হচ্ছে 'বি-লিটলার'। তারা অবশ্য মানুষকে জিনগতভাবে কিংবা ওষুধের মাধ্যমে মোডিফাই করার কথাও বলছেন।
এটা ঠিক, খাদ্য ও জ্বালানির বাইরেও লম্বা মানুষদের আরও অনেক কিছুই বেশি দরকার। পোশাক যেমন বড় হবে তেমনি থাকার জায়গাও বেশি লাগবে। তাই বলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় লম্বা হওয়াটাই প্রতিবন্ধক_ তা কিন্তু বলা যাবে না। এমনকি এটাও বলা যাবে না_ সবাই বামন হলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন হবে। এটা হয়তো অস্বীকার করা যাবে না, কিছুটা হলেও প্রভাব রয়েছে, যেটা গবেষণা করেই তারা বের করেছেন।
আসলে লম্বা-খাটো প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। সমাজে লম্বা মানুষের অবদান যেমন রয়েছে, তেমনি খাটোদেরও কম নয়। প্রত্যেকে তার যোগ্যতা দিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। মানুষ ভারসাম্যপূর্ণ সৃষ্টি। জোর করে লম্বা কিংবা খাটো করার চেষ্টার মাধ্যমে এই ভারসাম্য নষ্ট হবে, যেটা প্রাকৃতিক পরিবেশে এর চেয়েও কোনো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদিও বামনদের জন্য গবেষণাটি অন্তত মানসিক প্রশান্তির বিষয় হতে পারে। তাদের মাধ্যমে যদি জলবায়ু পরিবর্তন কিছুটা হলেও প্রশমন হয়, মন্দ কি।
বলে রাখা ভালো, গার্ডিয়ান একে ইমপ্রোবাবল রিসার্চ বা সম্ভাবনাহীন গবেষণা সিরিজে রেখেছে। যেখানে সবাই লম্বা হতে চায়, সেখানে খাটো করার চিন্তা অবান্তর। তারপরও বিজ্ঞান বলে কথা। তবে মানুষের আকৃতি নাকি দিন দিন ছোট হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও ছোট হওয়ার কথা বলছেন অনেকে। সেটাও হয়তো অন্তত জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের স্বার্থে এই গবেষকদের জন্য সুখবর। অতঃপর বামনদেরই জয়! সময়ই তা বলে দেবে।

ট্যাগঃ , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।