Mahfuzur Rahman Manik
শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই গতি চাই
জানুয়ারী 18, 2014

student-with-New-bookপ্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাবর্ষের হিসাব ইংরেজি বছরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বছর শুরু ও শেষ হওয়ার সঙ্গে বিদ্যালয়ে শিক্ষাবষের্র শুরু ও শেষ হয়। জানুয়ারির শুরুতেই তাই সরকারের তরফ থেকে বই দেওয়া হয় এবং নতুন বছরে নতুন ক্লাসও শুরু হয়। ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে যার সমাপ্তি। গোটা বছরে ক্লান্ত শিক্ষার্থী নতুন করে প্রাণ পায় জানুয়ারিতে। নতুন বছরের চেয়েও নতুন ক্লাসের আমেজে প্রত্যেকেই প্রাণচঞ্চল থাকে। তার ওপর নতুন বই ও নতুন নতুন সহপাঠী শিক্ষার্থীর সে হৃদয়কে আরেকটু উদ্দীপ্ত করে বৈকি। শিক্ষার্থীরা এ সময় চাপমুক্ত থাকে। তাই এ সময়ে পড়াশোনায় শিক্ষার্থীর অর্জন ভালো হওয়াই স্বাভাবিক। ফলে কাজে লাগানোর জন্য এ সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত দেখা যায় শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিকে, বিশেষ করে জানুয়ারি মাসজুড়ে ক্লাস অনেক কম হয়। অনেক জায়গায় ২-৩টি ক্লাস করেই ছুটি হয়ে যায়। অথচ প্রশাসন-শিক্ষকরা চাইলেই আরও বেশি ক্লাস নিতে পারেন কিংবা স্বাভাবিক সময়ের মতো পূর্ণোদ্যমে পড়াশোনা শুরু করতে পারেন। তা না করায় অনেক সময় দেখা যায় নির্দিষ্ট সিলেবাস শেষ হয় না এবং পরীক্ষার আগ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে শিক্ষার্থীর ওপর চাপিয়ে তা শেষ করার চেষ্টা করেন।
বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে না কিংবা শুরুতেই সিলেবাস শেষ করতে হবে, তাও নয়। এটা ঠিক যে, নতুন ক্লাসের অনেক বই-ই শিক্ষার্থীর কাছে কঠিন হতে পারে। সেটা শিক্ষকরা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবেন; যতটা পারা যায় শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর না হয়ে সহজে বোঝাবেন। তা শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই প্রয়োজন। এটা একদিকে যেমন নির্দিষ্ট সিলেবাস স্বাভাবিক নিয়মে শেষ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি জরুরি আমাদের রাজনৈতিক অবস্থার জন্য। গত বছরের অভিজ্ঞতা কারও অজানা নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অনেকে ঠিকমতো সিলেবাস শেষ করতে পারেনি; পরীক্ষা নিতে হয়েছে নানা ভোগান্তির মধ্যে। এভাবে হয়তো শিক্ষাবর্ষ পার হয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থীর কতটা অর্জন হলো তা নিশ্চয়ই ভাবার বিষয়। যদিও রাজনৈতিক অস্থিরতার দায় কোনোভাবেই শিক্ষার্থী-শিক্ষা ব্যবস্থা নিতে পারে না। কিন্তু আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে, শিক্ষা ব্যবস্থা সরাসরি এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি স্কুল পোড়ানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও দেখতে হয়েছে। অথচ এটা সবারই জানা, সব ক্ষতিই পোষানো যায় কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি অপূরণীয়।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা আমরা চাই না। রাজনীতির প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর পড়ূক তাও কেউ মেনে নেবে না। তারপরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ জন্য বছরের শুরু থেকেই যথাযথভাবে প্রত্যেকটি শিক্ষাঘণ্টা কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। পূর্ণোদ্যমে শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে মাঝপথের অপ্রত্যাশিত অবস্থার মোকাবেলা কিছুটা হলেও সম্ভব।student-in-the-class
বলার অপেক্ষা রাখে না, বছরের শুরুতে ঢিলেঢালা ক্লাসের বিষয়টা অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। আগে হয়তো একটা বাস্তবতাও ছিল। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পেঁৗছতে পেঁৗছতে গোটা জানুয়ারি লেগে যেত। তখন ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া সম্ভব ছিল না। এখন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়ে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই পুরোপুরি ক্লাস হওয়া সমস্যা নয়।
নতুন বইয়ের গন্ধ আর নতুন শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর প্রাণচাঞ্চল্য থাকতে থাকতেই শুরু হোক না পূর্ণোদ্যমে পড়াশোনা।

  • ছবি- ইন্টারনেট
ট্যাগঃ , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।