Mahfuzur Rahman Manik
রঙিন পোস্টার
আগস্ট 7, 2013

পথেEid Poster নামলেই চোখ ধাঁধানো রঙিন পোস্টার চোখে পড়বে সবার। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র এ পোস্টার দৃশ্যমান। আগে ছবির নায়কদের দেখা যেত পোস্টারে। এখন সে জায়গা হয়ে গেছে অনেকটা রাজনীতিকেন্দ্রিক। প্রতিষ্ঠিত নেতারা পোস্টারিং করেন। নেতা হতে চান এমন অনেকে পোস্টারিং করেন। নেতাদের আস্থাভাজন হতে চান, এ রকম কর্মীরা পোস্টারিং করেন। উপলক্ষ কিংবা উপলক্ষ ছাড়াও পোস্টারিং হয়। নেতা জেলে গেছেন, তার প্রতিবাদে পোস্টারিং; দলে পদ পেয়েছেন, বড় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারিং; বড় নেতা এলাকায় আসবেন, তার জন্য পোস্টারিং; বিজয়-স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিশেষ কোনো দিবস এসেছে, সে উপলক্ষে পোস্টারিং। পোস্টারিংয়ের যেন অন্ত নেই।
নির্বাচনের কথা বলাই বাহুল্য। জাতীয়, স্থানীয় পৌরসভা কিংবা ইউপি নির্বাচন তো বটেই। ছোট কোনো বিদ্যালয়, ক্লাব, সংগঠনের নির্বাচন সবকিছুতেই পোস্টারিং। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, হাট-বাজার ইত্যাদি প্রচারেও দেখা যায় পোস্টারের ব্যবহার।
প্রচারের মাধ্যম হিসেবে পোস্টারকেই সবাই ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে কম খরচে ও সহজে গণমানুষের কাছে পেঁৗছানো যায়। প্রযুক্তির কল্যাণে সহজেই পোস্টার করা যায়; চাইলে যে কারও ছবি হাতের মুঠোয় পাওয়া সম্ভব।
ঈদও পোস্টারিংয়ের অন্যতম সময়। ঈদের উৎসবকে নিজের প্রচারে কাজে লাগাতে চান অনেকে। ফলে ঈদ উপলক্ষে বাহারি পোস্টার দেখা যায় সবখানে। এবারের ঈদও তার ব্যতিক্রম নয়। সংবাদমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে সে খবর প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদ এখন শেষের দিকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় ফিরছেন। অনেকে এলাকায় সশরীরে যেমন প্রচার চালাচ্ছেন, তেমনি ঈদ শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টারও ছাপিয়েছেন। পোস্টার যে প্রার্থীদের প্রতিযোগিতার অন্যতম বিষয়।
পোস্টার এখন অধিকাংশই চার রঙের। এমনকি বর্ষায় বৃষ্টি যাতে স্পর্শ করতে না পারে, সে জন্য
ওপরে প্লাস্টিক সংবলিত পোস্টার দেখা যায় অনেক জায়গায়। পোস্টারের বাইরে এখন বাহারি ব্যানারও চোখে পড়বে। এগুলোর দিকে তাকালে লেখার চেয়ে ছবিই ভাসবে চোখে। প্রত্যেক পোস্টারে রঙিন রঙিন চার-পাঁচ জনের ছবি থাকবেই। দলের প্রতিষ্ঠাতার ছবি, বর্তমান প্রধানের ছবি, প্রধানের পারিবারিক প্রভাবশালী কারও ছবিও যেন থাকতে হবে। আবার ওয়ার্ডের কোনো নেতা পোস্টার ছাপালে মহানগরীর নেতাদের ছবিও থাকবে। প্রত্যেকটা পোস্টারই বলে দিচ্ছে কার উদ্দেশ্য কী। এমনকি অনেক নেতাকে রাজপথে আন্দোলনে দেখা না গেলেও নিজেদের সক্রিয় দেখাচ্ছেন পোস্টার ছাপিয়ে। নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ, নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এর মূল উদ্দেশ্য। পোস্টারও যে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের অন্যতম হাতিয়ার।
পোস্টার কিংবা ব্যানার যখন রঙিন, তার খরচটাও নিশ্চয়ই কম নয়। এর মাধ্যমে প্রচারের বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। তারপরও এভাবে প্রচারে টাকা খরচ না করে অন্য কোনো কাজে তা লাগানোর বিষয়ে চিন্তা করা দরকার। বিশেষত ঈদে এটা প্রয়োজন। ঈদ যাদের কাছে নতুন পোশাকের বদলে কষ্ট নিয়ে আসে, নিত্যদিন বেঁচে থাকার সংগ্রামে যারা পরাস্ত, অনাথ এবং দুঃখী মানুষের জন্যও ঈদ যাতে ঈদ হিসেবে আসে তাদের জন্য এর পরিবর্তে কিছু করাটা বুদ্ধিমানের কাজই হবে। রঙিন পোস্টারে মানুষের চোখ জয় না করে যদি হৃদয় জয় করা যায়, মন্দ কী!

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।