Mahfuzur Rahman Manik
নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত শিক্ষা!

sleep_deprivation_624মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে যেমন খাবার খেতে হয়, তেমনি ঘুমাতেও হয়। কিন্তু মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের কথা থাকলেও ঘুম নেই। আসলে ঘুম যে নেই তা নয়, বাসস্থানের কথা বললে ঘুম এসে যায়; বাসস্থান নিশ্চিত হলে তার ঘুমও নিশ্চিত হয়। অবশ্য নির্দিষ্ট বাসস্থান না থাকলেও মানুষ যেভাবেই হোক তার ঘুমানোর প্রয়োজন মেটায়, সেটা শহরের ফুটপাতে হোক কিংবা হোক খোলা আকাশের নিচে। প্রকৃতিগতভাবেও দেখা যায় দিনের দুটি অংশ_ দিন ও রাত। রাতের প্রকৃতিই বলে দেয় এটি মূলত ঘুমানোর জন্য। দিনে কাজ করে ক্লান্ত মানুষ রাতে ঘুমিয়ে তার ঘাটতি পূরণ করেন। ঠিক কত সময় ঘুমাতে হবে সেটাও বিজ্ঞানীরা বলে দিচ্ছেন। নূ্যনতম ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানোর কথা বলেন অনেকে। এমনকি বলা হচ্ছে, ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে স্ট্রোকসহ নানা শারীরিক অসুস্থতার আশঙ্কাও রয়েছে। এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ৮ মে বিবিসিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু নয়। বিবিসির শিরোনাম_ ল্যাক অব স্লিপ ব্লাইটস পিউপিলস এডুকেশন (নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত শিক্ষা)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজ কর্তৃক পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নিদ্রাহীনতা স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্কোর কম হওয়ার পেছনের এক অদৃশ্য কারণ। যাকে দেখেছেন ঘুম বঞ্চনা হিসেবে। তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবার ওপরে। যেখানে ৯-১০ বছরের ৭৩ ভাগ শিক্ষার্থীই ঘুম বঞ্চনার শিকার। আর ১৩-১৪ বছরের ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছেন শিক্ষকরা, যাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না। এ তালিকায় উপরের দিকে আছে নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব, কুয়েত ও অস্ট্রেলিয়াসহ আরও অনেক দেশ।
ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ দেখা যাচ্ছে 'প্রযুক্তি'। উন্নত দেশগুলোতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ইন্টারনেট সবার কাছে থাকায় ঘুমের ওপর একটা প্রভাব পড়েছে এবং তা থেকে ৯ বছরের শিশুরাও বাদ যায়নি। আমাদের দেশে অবশ্য সেভাবে চিন্তা করা কঠিন। যেহেতু প্রযুক্তি এখনও অনেক মানুষের নাগালের বাইরে। তবে তা আরেকটু উপরের দিকে দেখা যায়। উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা তারপরের বিশ্ববিদ্যালয় সময়টায় যাদের নিজস্ব কম্পিউটার থাকে তাদের অনেকে, অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। অনেকে রাতে মোবাইলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেন। এর বাইরেও রাতের অনেকাংশজুড়ে পড়াশোনা করেন এমনও আছেন। কিন্তু এ ঘুম কীভাবে শিক্ষায় প্রভাব ফেলছে? ভালো ঘুম সুস্থতার লক্ষণ। ঘুম না হলে শরীর ঠিক থাকবে না। ফলে পড়াশোনাও ঠিকমতো হয় না। আবার রাতে না ঘুমালে দিনে ক্লাস করা অসম্ভব কিংবা ক্লাস করলেও পাঠে মনোযোগ দেওয়া কঠিন। ফলে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শিশু যারা বেশি ঘুমায় তাদের ব্রেন ঠিকভাবে কাজ করে। তারা গণিত এবং বিজ্ঞানে বেশি মার্কস পায়।
গবেষকরা যাই বলুক, এ প্রবাদ তো সবার জানা 'আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ মেকস অ্যা ম্যান হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াউজ', দ্রুত ঘুমানো আর সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যবান, সম্পদশালী আর জ্ঞানী বানায়। সেদিক থেকেও অন্তত বোঝা যায়, যারা রাতে দেরিতে ঘুমাতে যায়, দিনে ঠিকমতো ঘুমায় না, স্বাভাবিকভাবেই প্রভাবটা শিক্ষার ওপর পড়বে। তবে কোনো কিছুই আসলে চিরন্তন নয়। গবেষকরা এ প্রবাদকেও চ্যালেঞ্জ করছেন। ডেইলি মেইলের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে তাই দেখা গেল। এক হাজার মানুষের ওপর গবেষণা করে আর উইনস্টন চার্চিল ও চার্লস ডারউইনকে উদাহরণ দিয়ে বলছেন, 'আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ ওন্ট মেক ইউ ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ।' তবে তারা হেলদি উল্লেখ করেননি। তারপরও নিয়মমতো ঘুমের কথা সবাই বলবেন, তা বলাই বাহুল্য।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।