Mahfuzur Rahman Manik
শরীফার ডায়েরি
Sharifa
শরীফা সুলতানা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

শরীফার পাতাগুলো ওল্টানোর সৌভাগ্য হয়নি। ২২ মে সমকাল তার ডায়েরির কিছু কথা পাঠকদের জানিয়েছে। 'শরীফার ডায়েরির পাতায় পাতায় কষ্ট' শিরোনামের প্রতিবেদনটি পড়ে ঘটনাটি অনুধাবনের চেষ্টা করছিলাম। কোনো হিসাবই মেলাতে পারিনি। স্বপ্নচারী এক তরুণীর কষ্টমাখা ডায়েরির পাতার সামনে অসহায় মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করলাম। প্রবোধ দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। প্রবোধ দিতে গিয়ে বুঝলাম এটা প্রহসন। ধিক্কারই আমার পাওনা। আমিও যে একজন পুরুষ। মাহমুদুলের চেয়ে ব্যতিক্রম কোনো প্রাণী নই। এও কি সম্ভব! একজন মেয়ে সংসারী হতে চেয়েছিলেন। মমতাময়ী মা হওয়ার তীব্র বাসনা ছিল তার। প্রিয়তমা স্ত্রী? না তিনি কিছুই হতে পারেননি। স্বামী নামক পাষণ্ড তাকে কোনোটাই হতে দেয়নি। জবাই করে পাঠিয়ে দিয়েছে না ফেরার দেশে। চাপাতির রক্তে রঞ্জিত হয়েছেন শরীফা।
শরীফা 'মানববন্ধনের' খবর হিসেবে সামনে আসে ১৯ মে। ইডেন কলেজের সহপাঠীরা তার হত্যার বিচারের দাবি করেছে। সেখানে একজন ব্যানার নিয়ে এসেছেন 'মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই কেন নিথর হয়ে গেল এই হাত', তিন প্রশ্নবিশিষ্ট এই ব্যানারের উত্তর আমাদের জানা নেই। অথচ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে তাদের বিয়ে হয়েছে। একটু সুখী হতে চেয়েছিলেন তিনি। বিয়ের পরই হয়তো বুঝতে পারেন তার স্বামীকে। ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন, 'তোমার দেওয়া অনেক কন্ডিশনের পরও বিয়ে করেছি। বিয়ের পর আর আমার চোখের পানি ঝরবে না, এমন আশা করেছিলাম। ... কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত ভালোবাসা আর বিয়ে করার পর থেকে এই পর্যন্ত চোখের পানিতে সাগর সৃষ্টি হয়ে গেছে। জানি না আর কতদিন তুমি আমার চোখ থেকে পানি ঝরাতে আনন্দ পাবা।' নিয়মিত স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করা শরীফা ভেবেছিলেন, তার স্বামী হয়তো কোনোদিন বুঝবে। কিন্তু পাষণ্ড স্বামী চোখের পানি ঝরানোর আনন্দ বুঝি আর চায়নি; একেবারে শরীফাকে বিদায় করেই ক্ষান্ত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের এপ্রিলে ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফা সুলতানার বিয়ে হয় বাগেরহাটের মাহমুদুল আলমের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই শরীফার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। শরীফা হয়তো সব নির্যাতনের খবর কাউকে জানাননি। তাই ডায়েরিই ছিল তার ভরসা। একেবারে সঙ্গোপনে ডায়েরিতে তার মনের কথা লিখেছেন। স্বামীর কাছে তার আবেদনও তিনি লিখেছেন, 'আমি তোমার কাছে একটা সুখের সংসার চাই। সুন্দর ঘর চাই, মা হতে চাই। তোমার ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই।' Sharifa1
শরীফার ডায়েরির খবর জানা গেল তার মৃত্যুর পর। আমরা জানি না কত শরীফা এভাবে ডায়েরি লিখছেন। কত পাষণ্ড স্বামী তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে চলেছে। একজন মেয়ে তার প্রিয় মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ছেড়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর কাছে আসে_ তার সংসার হবে, তিনি মা হবেন। স্বামী তাকে রানীর মতো করে রাখবে_ এ স্বপ্ন দেখাও স্বাভাবিক। সেখানে মেয়েদের প্রতি শারীরিক, মানসিক নির্যাতন কীভাবে সহ্য করা যায়। আর একেবারে জ্যান্ত স্ত্রীকে মেরে ফেলা? এর চেয়ে বর্বরতা আর কী হতে পারে।
শরীফা বারবার একটু ভালোবাসাই চেয়েছিলেন। ডায়েরিতে স্বামীকে প্রশ্ন করেছেন, 'আমার জন্য কি তোমার মনে ভালোবাসা নেই? কোনোদিন কি হবে?' উত্তরটা তবে হত্যা করেই কি সে দিয়েছে?

ট্যাগঃ , , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।