Mahfuzur Rahman Manik
আহা বৃষ্টি!
এপ্রিল 4, 2013
Rain-Dhaka
নামে ঢাকা হলেও রাজধানী এ শহরটি আসলে উন্মুক্ত। সব মানুষের আশ্রয় এখানে। বিশতলার ওপর মানুষ যেমন থাকছে, তেমনি থাকছে নিচতলায়; এমনকি ফুটপাতেও। যে যেভাবে পারছে কোনোমতে মাথা গুঁজে থাকছে। ঢাকায় বস্তি রয়েছে চার হাজারের মতো, যেখানে বাংলাদেশ নগর গবেষণা কেন্দ্রের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী ৭ বছর আগে বস্তিবাসী ছিল প্রায় ৩৫ লাখ। বর্তমানে তা ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে কেউ কেউ বলছেন। ফুটপাতে, রেললাইনের পাশে ও বিভিন্ন জায়গায় খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যারা বাস করেন, তারা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কি-না জানা নেই। আজ রাত এখানে, কাল ওখানে_ এ রকম ভাসমান মানুষের সংখ্যাও হয়তো কম নয়। এ ছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ তো আসছেই। মানুষের চাপে ভারাক্রান্ত শহরটি উদারভাবে সবাইকে আশ্রয় দিচ্ছে। নানা সংকট হয়তো সৃষ্টি হচ্ছে, তারপরও মানুষ এসে এখানে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে।
ঢাকার প্রতিটি জায়গা অমূল্য। কয়েক বছরে বাসা ভাড়া যেমন বেড়েছে কয়েকগুণ, জীবনযাত্রার দাম-মান তেমন বেড়েছে। এখানকার জায়গার দাম যেমন আকাশচুম্বী হয়েছে, আবার একই সঙ্গে বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। সহজেই হয়তো এখন যে কেউ ফুটপাতে জায়গা করে নিতে পারে। এভাবে ঢাকা তো কেবল মানুষকে আশ্রয়ই দেয় না, বেঁচে থাকার জন্য আয়ের একটা পথও বাতলে দেয়। যেন এখানে এলেই কেবল একটা ব্যবস্থা হবে। 'ঢাকায় টাকা ওড়ে' প্রচলিত কথাটি হয়তো কারও অজানা নয়। রাস্তার পাশে মোবাইলের ফ্লেক্সি বিক্রি করে জীবনধারণ করছে কত মানুষ। হেঁটে হেঁটে চা-পান-সিগারেট বিক্রেতার সংখ্যা কম নয়। সকালে মানুষের দরজার নিচ দিয়ে পত্রিকা দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। শহরের বুয়াদের হিসাব করা যাক_ এ রকম ভাসমান পেশার অভাব নেই। অর্থনীতির হিসাব করলে হয়তো বলা যাবে, এটা খারাপ অর্থনীতির উদাহরণ কিংবা এরা সরাসরি দেশের উৎপাদনমূলক কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরও এগুলো একেবারে ফেলনা নয়, যেহেতু এর দ্বারা মানুষ তার জীবন নির্বাহ করছে।
এসব ঢাকার অবদান। যে ঢাকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঘুম নেই প্রশাসনের, নানা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন গবেষকরা। বাস্তবেও নানা সমস্যা রয়েছে শহরটির। মানুষের ভারে আক্রান্ত এটি। পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দুর্ভোগ প্রতিনিয়ত পোহাচ্ছে মানুষ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা হয়তো বাতুলতা। পরিবেশের দিক থেকে এটি আসলে বসবাসের অযোগ্য। এ শহরে ঋতু বৈচিত্রতা বোঝার উপায় নেই। মোটাদাগে শীত ও গরম হয়তো বোঝা যাবে। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে গ্রামের খাঁখাঁ মাঠ দেখার সুযোগ নেই। শরতের কাশফুল কিংবা বোশেখের আমের মুকুলও শহরবাসী দেখতে পায় না।
তবে বৃষ্টিটা ঠিকই টের পায় এখানকার মানুষ। শীতের পর এখন ঋতুর রাজা বসন্তও যাওয়ার পথে। তবে শহরে অনেকদিন বৃষ্টির দেখা নেই। এরই মধ্যে সোমবার ভোর ৪টায় হঠাৎ বৃষ্টির শব্দে ঘুম থেকে যেন লাফিয়ে উঠলাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, এ তো কেবল বৃষ্টি নয়, একেবারে শিলাবৃষ্টি। গরমের মধ্যে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া শীতল এ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ভাবছি_ আহা, ঢাকার ফুটপাতের মানুষগুলোর কী হবে। কী হবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিংবা বস্তির ৪০ লাখ মানুষের, একটু বৃষ্টিতে যাদের অনেকের শোয়ার বিছানায় গোসল হয়ে যাওয়ার কথা।
ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।