Mahfuzur Rahman Manik
ডায়েরির পাতা
জানুয়ারী 10, 2013

image_344_67424ডায়েরির পাতা কথা বলে। নানা কথা বলে, প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা যেমন বলে, তেমনি মৃত ঘটনাগুলোকে জীবন্ত করে চোখের সামনে আনে। ইতিহাসকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে এসেছে। এ রকম নানা ঘটনা আমরা বিখ্যাতদের ডায়েরি থেকে জেনেছি। ডায়েরি অনেকের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় হলেও একটা সুদূরপ্রসারী ফল আছে। বিখ্যাতরা বলেন, আজ তুমি ডায়েরি রাখো, একদিন ডায়েরিই তোমাকে রাখবে।
নতুন বছরের সঙ্গে এই ডায়েরির সম্পর্কটা যেন অবিচ্ছেদ্য। নতুন বছরের কোনো গিফটের তালিকা করলে ডায়েরিটাই হয়তো প্রথমে আসবে। শুরু হওয়া ২০১৩ সাল উপলক্ষে অনেকে নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে অনেক ডায়েরি পেয়ে থাকবেন। নতুন বছরে ডায়েরি দেওয়ার এমন কী কারণ আছে; ডায়েরিতে যে তারিখ লেখা আছে তা দেখা? সে জন্য তো ক্যালেন্ডারই আছে। ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য নিশ্চয়ই কেউ কাউকে ডায়েরি উপহার দেওয়ার কথা নয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ যারা, যাদের বিভিন্ন সিডিউলে ডায়েরি ঠাসা থাকে তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। অবশ্য অন্যরাও তাদের প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো টুকে রাখতে পারেন। তারপরও মনে হয় না এতে ডায়েরির মূল উদ্দেশ্য হাসিল হলো।
ডায়েরিতে থাকে কতগুলো সাদা পাতা। পাতার রঙ ভিন্নও হতে পারে। রঙ যা-ই হোক, সেখানে কিছু লেখা থাকে না। এই পাতাগুলোতে লেখার জন্যই ডায়েরি। ব্যক্তি তার ইচ্ছামতো যে কোনো কিছু লিখেন। নির্দিষ্ট দিনে কী ঘটল তা যেমন লিখেন, তেমনি সে ঘটনায় ব্যক্তি তার অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণও লিখেন।
বিজ্ঞানীরা এই ডায়েরি নিয়েও কথা বলেছেন। এই যে ডায়েরি লেখা, ডায়েরির পাতা ভরানো; এর গুরুত্ব যে কেবল ঘটনাগুলো লিখে রাখা তা নয়; যাতে পরবর্তীকালে আগের বিষয়গুলো দেখা যায় কিংবা পরবর্তী প্রজন্ম ব্যক্তিকে ডায়েরির মাধ্যমে স্মরণ করে, তাও নয়। এসব তো ভবিষ্যতের কথা। বর্তমান লাভের কথাই বলেছেন বিজ্ঞানীরা। যেমনটা ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান বলছে, অ্যা ডায়েরি মেকস ইউ হ্যাপিয়ার। ডায়েরি ব্যক্তিকে অধিক সুখী করতে পারে। ব্যক্তি মাত্রই সামাজিক জীব। রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তার আবেগ আছে, অনুভূতি আছে। গার্ডিয়ান মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার তরফে বলছে, যখন কেউ তার অনুভূতি ডায়েরিতে বিস্তারিত লিখেন, গদ্যাকারে হোক কিংবা পদ্যাকারে হোক বা কোনো গান লিখেন। এর মাধ্যমে ব্যক্তি তার আবেগকে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রকাশ করতে পারছে। ব্যক্তির এই ভাবপ্রকাশই তাকে সুখী করে। এটা যেমন আমরা প্রাত্যহিক জীবন থেকে বুঝি, কারও সঙ্গে কোনো বিষয় শেয়ার করলে নিজেকে অনেকটা হালকা মনে হয়। মনোবিজ্ঞানীরা সেটাই বলেছেন, ডায়েরি লেখার মাধ্যমে ব্যক্তির মস্তিষ্কের ইতিবাচক বিষয়গুলো অধিক সক্রিয় থাকে; হতাশা থেকে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সে সুখী হয়।
বিখ্যাত অনেকে ডায়েরি লিখেন আবার অনেকে ডায়েরি লিখেও বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেন। ডায়েরি লেখাটা একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয়। অনেকের ডায়েরি না থাকলেও অন্য কাগজে বা খাতায় ডায়েরি লিখেন। অনেকের হাজারটা থাকলেও না লিখতে পারেন। তবে নতুন বছরে যারা গিফট পেয়েছেন, ডায়েরিটা তারা আজই লেখা শুরু করে দিতে পারেন। যারা গিফট পাননি তারাও ডায়েরি কিনে লেখা শুরু করতে পারেন। বলা যায় না আপনার ডায়েরির পাতাও একদিন বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে।

সমকালে প্রকাশিত ১ জানুয়ারি ২০১৩

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119