Mahfuzur Rahman Manik
স্কুলবাস হাজির!
ফেব্রুয়ারী 2, 2011


সমকালে প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ছবি। বাসের ভেতরকার ছবি। সব যাত্রীর মুখে হাসি। পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্কুলের শিক্ষার্থী, তাদের সাথে রয়েছেন অভিভাবক। ষোল জানুয়ারি ঢাকার স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হওয়া বাসের ছবি। প্রাথমিকভাবে ঢাকার আজিমপুর হতে পল্লবী রুটে ছাব্বিশটি স্কুলের জন্য চালু হয় এ সেবা।
যানজটের নগরী, মেগাসিটি ঢাকার জন্য স্কুল বাসের উদ্যোগ কতটা প্রশংসনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের প্রাণ কাড়া হাসিই বলে দেয়, বাস পেয়ে তারা কতটা খুশি। শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে, কেউ আবার ভ্যান কিংবা অনেক কষ্টে অন্য গাড়িতে চড়ে স্কুলে আসে। ব্যক্তিগত গাড়ি যেমন একদিকে তীব্র যানজট সৃষ্টি করে অন্যদিকে এর বাইরের অন্যান্য যানবহনে রয়েছে কষ্ট আর নিরাপত্তাহীনতা। স্কুল বাস সেসব ঝক্কিঝামেলার চমৎকার সমাধান।
প্রতিদিন সকাল ছয়টা হতে নয়টা, দুপুর এগারোটা হতে তিনটা পর্যন্ত দশ মিনিট পরপর বাস চলবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বাস থামার জন্য তেত্রিশটি স্থান নির্ধারণ করেছে। আপাতত চৌদ্দটি বাস দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।
স্কুলের বাসের ধারনাটি আমাদের কাছে নতুন হলে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ পুরনো। আঠারশ সাতাশ সালে লন্ডনের জর্জ শিলবিয়ার প্রথম এ ধারনার প্রচলন করেন। এরপর থেকে লন্ডন আমেরিকাসহ অনেক দেশই চালু হয় স্কুল বাস। বাসগুলোর রঙ সাধারনত হলুদ, এর জন্য রয়েছে আলাদা লেন-রুট।
স্কুল বাস চালুর সপ্তাহখানেকের মাথায় পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে যে কেউ হোঁটচ খাবে। তেইশ জানুয়ারি ‘স্কুলবাসে ভিড় নেই’ শিরোনামে সমকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি শুধু যাত্রী শুন্যতার কথাই নেই আছে আরো দুর্দশার কথা। এ দুর্দশার চিত্র আরো স্পষ্ট হয় ‘অনেক অভিযোগের পরও স্কুল বাস চান সবাই’ শিরোনামে আরেকটি দৈনিকের প্রতিবেদনে। সমকালের প্রতিবেদক দেখিয়েছেন- বাইশ জানুয়ারি প্রথম বাসটি ছাড়ে যাত্রী শুন্য। পনের মিনিট পর দ্বিতীয় বাসটির অবস্থাও তাই।এর পনের মিনিট পর তৃতীয় বাসটির জন্য যাত্রী মেলে দুই শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। দিনের অন্যান্য সময়ের চিত্রও খুব ভালো নয়। বায়ান্ন সিটের বাস যাত্রী পাচ্ছে বিশ-পঁিচশ জন। যাত্রীর এ অবস্থায় নিশ্চিতভাবেই ‘অনিশ্চিত গন্তব্য যাচ্ছে স্কুল বাস’ একথা সবাই বলবে।
প্রত্যেকদিন বাসপ্রতি খরচ বাইশ-তেইশশত টাকা। বাস কিনতে প্রত্যেকটির জন্য খরচ হয়েছে বত্রিশ লাখ টাকা। স্কুল বাস চালাতে নামমূল্যে পাঁচ হতে আঠারো টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়। বাসগুলোতে শিক্ষার্থী ভরপুর হলে বিআরটিসির লোকসান কিছুটা হলেও কম হতো। এখন একদিকে লোকসান অন্যদিকে যাত্রীনেই। যাত্রী বেশি থাকলেও এ লোকসান বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নেয়া যেতে।
এক সপ্তাহের মধ্যেই ‘স্কুল বাস প্রকল্প’র অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ার বাস্তব কারন অবশ্যই আছে। প্রথমতঃ এর যথেষ্ট প্রচার হয়নি। দ্বিতীয়তঃ যারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে সন্তানদের স্কুলে পাঠান, তারা এখনো এ বাস ব্যবহার করছেননা। তৃতীয়তঃ দশ মিনিট পরপর বাস ছাড়ার কথা থাকলেও তা বিশ-পঁচিশ এমনকি ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত দেরি হয়। আরো দেখছি যেসব বিদ্যালয়ে দিবা শাখা চালু আছে তারা এ সেবা হতে বঞ্চিত। তাদের ক্লাস শুরু হয় বারোটায় শেষ হয় পাচঁটায়।
লক্ষ্যকরার বিষয় হলো ‘স্কুল বাস’ কার্যক্রমটি দুটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চলছে। ফলে তাদের মাঝে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও উঠে এসছে। বাস সার্ভিস কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিআরটিসি, স্কুলে স্কুলে প্রচার, টিকেট ব্যবস্থার কাজ করছে মাউশি তথা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে স্কুল বাস কার্যক্রম শুরু হলেও এখনও বলা হচ্ছে প্রচারের অভাব। একজন অভিভাবকই বলেছেন স্কুলের তরফে তারা কোন সংবাদ পাননি। গনমাধ্যমের সংবাদের মাধ্যমেই তিনি জেনেছেন। তার মানে স্কুলগুলোর এ কাজে একটা অবহেলা এখনও স্পষ্ট।
সবকিছুর পরও প্রধান সমস্যা একটাই অভিভাবকদের অনীহা। অভিভাবকরা যদি আগ্রহী হয়ে তাদের সন্তানদের ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে না পাঠিয়ে স্কুল বাসে পাঠান, একদিকে এ কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য হাসিল হবে, যানজট কমবে। অন্যদিকে কার্যক্রমটি সফল ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। অবশ্য বাস নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের উৎসাহ আছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে এখন বেগ পেতে হয়না। তারা চাননা এ সুন্দর ব্যবস্থাটি বন্ধ হোক।
স্কুল শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মত কর্তৃপক্ষেরও উৎসাহ আছে। এ কার্যক্রম সফল হতে আছে বিস্তর পরিকল্পনা। এখন বাস সংখ্যা চৌদ্দটি আর একটা রুটে হলেও, আরো একশ পঁচাত্তরটি বাস দিয়ে ঢাকার সবগুলো রুটে এ কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা আছে দক্ষ নারী নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের। এছাড়া বাসে শিশুতোষ ও শিক্ষামূলক ভিডিও আর স্কুলে শিক্ষার্থী পৌঁছলে, অভিভাবকদের নিকট অটো মেসেজিং সিস্টেম চালুরও পরিকল্পনা আছে।
এতসব পরিকল্পনা আর উৎসাহ থাকতে ভেস্তে যেতে পারেনা স্কুল বাস কার্যক্রম। বিটিআরসি, মাউশি, স্কুল কর্তৃপক্ষ সর্বোপরি অভিভাবকদে সকলের অংশগ্রহন ও প্রচেষ্টায় সফল হবে এ কার্যক্রম। যাজট কমবে। স্বস্তি আসবে।

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।